নিজস্ব প্রতিবেদক
‘ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে আনতে সময় লাগবে’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছন, বেশ কিছু ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। কিছু কিছু ব্যাংক এখনো করেনি। তবে দেশের সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার একযোগে এক অঙ্কে অর্থাৎ ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগটাই কঠিন ছিল। আমি বোধহয় তখনই বলেছিলাম এটি যত জলদি করা যায়। তবে এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সবগুলো ব্যাংকের পক্ষে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে এত দ্রুত সম্ভব নয়।
এ কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে কিনাÑ জানতে চাইলে মুহিত বলেন, না না; বিশৃঙ্খলা হবে বলে আমার মনে হয় না। পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে। আমানতে সুদহার কমানোর জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো তাদের আমানত বেসরকারি ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ হয়তো উঠাবে। এটা তাদের ব্যবসার ব্যাপার।
ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৬ শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি ব্যাংকের টাকা বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিট করার সুযোগ করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় দেশের অর্থনীতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান ও আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আরো গতিশীল করতে মূলত এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি); যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা রয়েছে। সেদিন ব্যাংক হলিডে থাকায় ২ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এটি কার্যকর করে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। চলতি সপ্তাহে এসব ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকগুলো শুধু শিল্প ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নেবে। আর আমানতকারীদের তিন মাস মেয়াদে আমানতের সুদ দেবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ক্ষেত্রে সুদহার কমানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সংকট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার ১৭-১৮ শতাংশ দাঁড়ায়। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের নীতিসহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর)। সব তফসিলি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
"