শাহ্জাহান সাজু

  ২০ জুন, ২০১৮

শর্ত খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারকরণ

চলতি মাসেই মূলধন সহায়তার অর্থ ছাড়

খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করার শর্তে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের আগেই মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এই ব্যাংকগুলো গত কয়েক বছর ধরে চরম মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে। ঘাটতি পূরণে অর্থ বিভাগের বাজেটে রাখা ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাত থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মূলধন পেতে ব্যাংকগুলোকে কতগুলো শর্ত পরিপালন করতে হবে। এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করা এবং এই অর্থ মূলধন বাদে অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা চলবে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত মার্চ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে আমাদের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন কাজে ব্যস্ত থাকায় এই অর্থ দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এখন ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা বাবদ অর্থ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ মাসের মধ্যে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে কোন ব্যাংককে কি পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ছয়টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হয়। এতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের অধীনে ‘ব্যাংক মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরে যেন ছয়টি ব্যাংককে অর্থ প্রদান করা হয়।

সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চাহিদাপত্রে চলতি বছর সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের জন্য ৪০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের জন্য ৩০০ কোটি টাকা, বেসিকের জন্য ৩০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জন্য ৪০০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য চাওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের বেসিক ব্যাংককে। ব্যাংকটিকে মোট দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটিকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। একইভাবে জনতা ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংককে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এ বছরের শুরুতে রাষ্ট্রীয় ছয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিই হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। আলোচিত ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণের জন্য চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংক চেয়েছে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চেয়েছেন সাত হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক চেয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist