রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস এবং মিথ্যা ঘোষণাসহ সব পর্যায়ে শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করে বাণিজ্য ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি অটোমেশনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ‘ঝুকি ব্যবস্থাপনা সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল ইউনিট’ গঠন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশেষ এ ইউনিট আগামী দুই বছর মেয়াদে গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি এনবিআর থেকে বিশেষ এক আদেশে ওই টিম গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিশেষ দলের প্রধান কাজ হবে শুল্ক আদায়ে যত রকমের ঝুঁকি এবং শুল্ক ফাঁকিতে যত ধরনের ঝুঁকি রয়েছে তা মোকাবিলা করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি সংযোজন করা। অর্থাৎ ঝুঁকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় হুমকি হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও যন্ত্রাংশ প্রবেশ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে দলটির প্রধান কাজ।

জানা যায়, এনবিআরের শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের বিশেষ এই ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম। ইউনিটের অন্য সদস্যরা হলেনÑ ইউনিট পরিচালক ও শুল্ক মূল্যায়নের প্রথম সচিব এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ, ইউনিট যুগ্ম পরিচালক ও বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার আ আ ম আমীমুল ইহসান খান, ইউনিটের উপ-পরিচালক এবং রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপ-কমিশনার ে মো. সাইফুল হক এবং ইউনিট সহকারী পরিচালক সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাকারিয়া।

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন-১) শামসুদ্দীনের স্বাক্ষর করা আদেশ সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্য ব্যয় হ্রাস ও অটোমেশনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের ওই কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল ইউনিট’ গঠন এবং ওই ইউনিটের কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের স্থল, রেল, নৌ কিংবা বিমানবন্দরভিত্তিক সব শুল্ক স্টেশনগুলোতে পণ্য আমদানিতে শুল্ক আদায়ের যত ধরনের ঝুঁকি এবং শুল্ক ফাঁকিতে যত ধরনের ঝুঁকি রয়েছে, তা মোকাবিলা করে কাটিয়ে উঠতেই কাজ করবে ‘ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল ইউনিট।’ বিশেষ এই ইউনিট স্টেশনগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। সাধারণত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সবসময় মিথ্যা ঘোষণাসহ শুল্ক ফাঁকির বিভিন্ন কৌশল ধরা সম্ভব হয় না। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করাটা জরুরি। যে মেশিন দূর থেকেই কন্টেইনারগুলোর ভিতরের পণ্য ও পণ্যের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করে দেবে। অর্থাৎ ঝুঁকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে এসব বিষয়ের উন্নতি ঘটানোই হবে এই ইউনিটের প্রধান কাজ। যদিও এখন এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে; যা বাস্তবতার তুলনায় অপ্রতুল। সেজন্য পুরো স্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বিশেষ এই ইউনিট দূর থেকেই অনেকটা নীরবে আমদানি-রফতানি সকল কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য এই ইউনিটের সঙ্গে একটি আইটি ইউনিটও যুক্ত করা হবে। যাতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে রাজস্ব আদায়ের বাইরে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা যায়। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্যামিক্যাল ও ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি অনেক সময় নিরাপত্তা বাহিনী চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ে ঢুকে পড়ে। বিশেষ এই ইউনিটের নেতৃত্বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা নিরিখে পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকি ও ক্ষতিকারক পণ্য দেশে আসতে না পারে।

"