নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মে, ২০১৮

ক্রেডিট রিপোর্টে গুরুত্ব না দেওয়ায় ৬০০ কোটি টাকার অনিয়ম

একটি রফতানি আদেশের বিপরীতে সম্প্রতি ২৬টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রফতানি করার পরও পেমেন্ট পায়নি। আমদানিকারককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৬০০ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা পরবর্তীতে সবার নজরে আসে। ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি ও খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা ব্যাংকিং খাতের সংগঠন মিলে ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য তথ্যভান্ডার সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে কোনো দুর্বল এবং ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট সরবরাহের সুযোগ থাকবে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। অনিয়ম এবং জালিয়াতির ঘটনাও কমে আসবে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘প্র্যাকটিসেস অব অবটেইনিং ক্রেডিট রিপোর্ট অব ফরেন কাউন্টার পার্টস ইন ট্রেড সার্ভিসেস ইজ ইট ওয়াকিং’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। তিনি গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন।

গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক অন্তরা জেরীন, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক প্রদীপ পাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদুর রহমান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ টি এম নেছারুল হক । গোলটেবিল বৈঠকের উদ্বোধন করে বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি দুইটিই বাড়বে।

তিনি বলেন, অর্থ পাচার ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কোনো লেনদেন যাতে না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ারম্যান প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, কমার্স ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক তৌফিক আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, সম্প্রতি একটি রফতানি আদেশের বিপরীতে ২৬টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রফতানি করার পরও পেমেন্ট পায়নি। আমদানিকারককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৬০০ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা পরবর্তীতে সবার নজরে আসে। ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

তিনি বলেন, ক্রেডিট রিপোর্ট হলো বিদেশি আমদানিকারক বা রফতানিকারকের বিষয়ে বিশদ বিবরণ। এর পেছনে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি ডলার অর্থ ব্যয় হয় যা অযৌক্তিক নয়। কিন্তু ক্রেডিট রিপোর্ট একদিকে যথাযথভাবে হয় না, অন্যদিকে গৎবাঁধা হলেও এসব ক্রেডিট রিপোর্ট কোনো ধরনের বিশ্লেষণ করা হয় না। ফলে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান জাল-জালিয়াতির সুযোগ পায়।

বিআইবিএমের চেয়ারম্যান প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য ব্যাংকারদের সর্তক থাকতে হবে। ব্যাংকাররা সতর্ক থাকলে কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধূরী বলেন, ব্যাংকারদের আরো সচেতন হতে হবে। কারণ কেউ যেন ব্যাংকারদের ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা কিংবা টাকা পাচার করতে না পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারের ৮৩ শতাংশ হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। এ কারণে ব্যাংক সতর্ক থাকলে কোনো অনিয়ম ঘটার সুযোগ নেই। কমার্স ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক তৌফিক আলী বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের লোভের কারণে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। ব্যাংক পরিচালকদের লোভ সংবরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ট্রেড সার্ভিস বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোরারোপ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist