শাহ্জাহান সাজু
অবশেষে নতুন ব্যবস্থাপনায় আসছে ফারমার্স ব্যাংক
আগামী বোর্ড সভাতে রাষ্ট্রীয় ৫ প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন পরিচালক যুক্ত হবেন
অবশেষে নতুন ব্যবস্থাপনায় আসছে ফারমার্স ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকটির আগামী বোর্ড সভায় রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংকের চারজনসহ ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একজন পরিচালক হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন। এছাড়া আরো দুই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এর মধ্যেই ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আইনি বাধা দূর করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তার ক্ষমতাবলে সম্প্রতি দেওয়া এক আদেশে ব্যাংক কোম্পানি আইনের এই তিনটি ধারা পরিপালন থেকে ব্যাংক চারটিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বেসরকারি এ ব্যাংকটিকে বাঁচাতে ৭১৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের প্রত্যেকে ১৬৫ কোটি টাকা করে ৬৬০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। আর বাকি ৫৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ফারমার্স ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৪০১ কোটি টাকা। এখন পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। এতে ব্যাংকটিতে মূলধনের প্রায় ৬৪ শতাংশই থাকবে সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের। আর পাঁচ প্রতিষ্ঠানের এমডিরা পদাধিকার বলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকবেন। বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গভর্নের আদেশে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কেনায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ (ক) ধারা এবং ২৬ (ক) ধারার বিধান পরিপালনে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংককে সাধারণভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবির পক্ষে তাদের সিইও বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্তির ক্ষেত্রে আইনের ২৩ (১) (ক) ধারার বিধান পরিপালন হতেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখতে পারবে না। ২৬ (ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ধারণকৃত শেয়ার বাজারমূল্যে ওই ব্যাংক কোম্পানির আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের মোট পরিমাণের পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না। ২৩ (১) এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবির ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এই ধারাগুলো প্রযোজ্য হবে না।
সূত্র আরো জানায়, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদ ও ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ আলমসহ চার পরিচালক ছাড়া অন্য পরিচালকরা পদত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিরা ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কেনার জন্য ইচ্ছাপত্র (ইওআই) পর্ষদে জমা দিয়েছেন। এটি অনুমোদন হলে প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন জোগান দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হবেন তারা।
জানা যায়, সম্প্রতি ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে সব পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ব্যাংকটির পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে পদত্যাগ করেছেন তারা। ব্যাংকের পর্ষদও সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। আগামী বোর্ড সভাতে রাষ্ট্রীয় পাঁচ প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন পরিচালক যুক্ত হবেন।
সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে ১২ উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন। এর মধ্যে রেইসের চারজন ছাড়া বাকি আটজন ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তা পরিচালক পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন ব্যাংকটি তৎকালীন চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তাছাড়া সেই দিনই ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
"