নিজস্ব প্রতিবেদক
শিল্পের পাশাপাশি বাজেটে কৃষি সমান গুরুত্ব পাবে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কিছুৃটা কমানো হবে। এছাড়া শিল্পের পাশাপাশি এবারের বাজেটে আমরা কৃষি খাতকেও সমান গুরুত্ব দেব। তবে আমরা যদি ছোট ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে চাই তাহলে করপোরেট ট্যাক্সে সুবিধা দেওয়া যাবে না। সেজন্য সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে এবারের বাজেট তৈরি করতে হবে। যাতে করে দেশে শিল্পায়ন হয়। গতকাল এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো জায়গায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট রাখতে হবে। চাইলেও সেটা বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ রাজস্ব আয় না হলে সরকার চলবে কীভাবে। তিনি আরো বলেন, অনেক ব্যবসায়ী কোনো কোনো খাতে ভ্যাট শূন্য করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে এটাও হয়ত সম্ভব হবে না। কারণ আয় তো হতে হবে। তবে বর্তমান অবস্থা থেকে কিছুটা কমানো হবে। আবার অনেক জায়গায় এটা বাড়তেও পারে বলে জানান তিনি।
বর্তমান সরকারের নজর এখন শিল্পায়নের দিকে উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তবে শিল্পের পাশাপাশি এবারের বাজেটে আমরা কৃষি খাতকেও সমান গুরুত্ব দেব। এক্ষেত্রে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদেরও আগামী বাজেটে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে যদি শুধু ব্যবসায়ীদের কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাহলে সব ভ্যাট গিয়ে পড়বে গরিব মানুষের ওপর। এটা হতে পারে না। তাই ভ্যাটের আওতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আলীমুল এহছান চৌধুরী বলেন, এগ্রিকালচার মেশিনারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য না হওয়ায় ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এই শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী কৃষি শিল্পের ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করার দাবি জানান। এছাড়াও তিনি বার্ষিক টার্নওভারের ওপর আয়কর সম্পূর্ণ অব্যাহতির দাবি জানান। বিটিএ’র চেয়ারম্যান মোঃ শাহীন আহমেদ বলেন, অনেক ট্যানারি মালিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পাচ্ছেন না। তাদেও ক্ষেত্রে কেমিক্যালগুলো আমদানি শুল্ক হার ৫ শতাংশের বেশি হলে কর অব্যাহতি প্রদান করার বিধান রয়েছে। এটাকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা দরকার। এছাড়াও দেশে খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে বিজিএমইএ যে সুযোগ-সুবিধা পায়, একই সুবিধা বিটিএ’কে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই শিল্পকে বন্ড ওয়্যার সুবিধাসহ যা যা দরকার এনবিআর নিজেরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি। ফিড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মসিউর রহমান পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল সয়াবিন মিল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি মওকুফ করার দাবি জানান। এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আসছে বাজেটে পোলট্রি খাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন থেকে তরমুজ ও ভাঙির বীজের আমদানির ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান কৃষিজাত পণ্যের বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির পক্ষ থেকে তৈরি বিস্কুট, পাউরুটি, বনরুটিসহ সব ধরনের বিস্কুটকে কর অব্যাহতি দেওয়ার দাবি করা হয়। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এই খাতে ভ্যাট কমানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
গতকালের প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা), বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ, এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টার্চ অ্যান্ড ডেরিভেটিভস ম্যানুফেকচারার্সসহ প্রায় ১১টি সংগঠন প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়।
"