নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থ পাচারের তথ্য এক জায়গায় আনার সিদ্ধান্ত
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কঠোর হচ্ছে সরকার
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কঠোর হচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ পাচারের বিষয়ে যেসব তথ্য রয়েছে, সেগুলো এক জায়গায় সংগ্রহ করে একটি ফাইল তৈরি করা হবে। ওই তথ্য ধরেই পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে পুনর্গঠিত কমিটি। প্রতি তিন মাস অন্তর এ কমিটির মিটিং হবে। মিটিংয়ে কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ফলোআপ করা হবে।
গত সোমবার বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কাউকে ছাড় না দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মাহবুবে আলম। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সূত্র জানায়, নানা কারণে দেশের অর্থ পাচার হচ্ছে। এই অর্থ পাচার কীভাবে আটকানো যায়; সেটি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে এক ছাতার নিচে এসে কীভাবে কাজ করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ পাচারের বিষয়ে যেসব তথ্য রয়েছে, তা সংগ্রহ করে একটি ফাইল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য ধরেই পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে কমিটি। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার কার্যকর্মের ওপর প্রতি তিন মাস অন্তর এ কমিটির মিটিং হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑএমন একজন এনবিআর কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, অর্থ পাচার করেছেন, এমন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে বলে মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তসংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো সমন্বয়ের ভিত্তিতে করা হবে।
জানা যায়, পানামা পেপারসে বাংলাদেশিদের নাম আসার পর বহুল আলোচিত প্যারাডাইস পেপারসের দ্বিতীয় তালিকায়ও ২০ বাংলাদেশির নাম আসে। এদের বিরূদ্ধে অবৈধভাবে ইউরোপে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসে (আইসিআইজে) এই তালিকা প্রকাশ করে। তবে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি ডলার সমমূল্যের প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে (২০০৫-১৪) বাংলাদেশ থেকে অন্তত ছয় লাখ ছয় হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ অঙ্ক দেশের মোট জাতীয় বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চারটি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। এগুলো হলো বিদেশ থেকে আনা আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানি পণ্যের মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি এবং মূল্য স্থানান্তরের মাধ্যমে।
"