নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ মার্চ, ২০১৮

রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

জানুয়ারিতে বড় প্রবৃদ্ধি

অবশেষে রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। গত জানুয়ারিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এছাড়া সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারিতে ১১৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং তা পাঠানোর খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়ায় বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তাছাড়া তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। ওইসব দেশের প্রবাসীরা বর্তমানে বেশি আয় করছেন। যার ফলে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত আগস্টে চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের তুলনায়ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১১৬ কোটি ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৩১ কোটি ২১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭১৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। অর্থবছরের এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন দেশে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এসেছে ৯৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে এই ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। সরকারি দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার।

৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে দেশের রেমিট্যান্স আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্স আয় বাড়তে থাকে। কিন্তু ওই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি এবং খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি থাকায় সেপ্টেম্বরে গত ৭ বছরের সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স আসে। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। তবে কম আসার বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে সংশ্লিষ্টদের। পরে রেমিট্যান্স কম আসার কারণ অনুসন্ধান ও হুন্ডির বিষয়ে নিশ্চিত হতে সরেজমিন তদন্তে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তদন্তে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার গ্রাহক ও এজেন্টের একাউন্ট বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর প্রতি মাসেই আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত এক বছরে ডলারের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী গত বছরের ডিসেম্বরে প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রতি ডলার ৭৮ টাকা ৫০ পয়সায় কিনত। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকটি ডলার কিনেছে ৮২ টাকা ৫০ পয়সায়। এতে দেখা গেছে, ১ ডলার বিক্রি করে ৪ টাকা আয় বেশি হয়েছে প্রবাসীদের। তবে ব্যাংকভেদে ডলারের দাম আরো বেশি বেড়েছে। বৈধপথে আয় বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাছাড়া হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় বাধ্য হয়েই বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist