নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহী এডিবি
বাংলাদেশে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও। প্রতিশ্রæত ঋণ সহায়তার বাইরেও অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে এই অর্থায়নের পাশাপাশি সরকার চাইলে যেকোনো বড় প্রকল্পে এডিবি অর্থ দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাওর বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে গতকাল ঢাকাস্থ এডিবির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভ‚য়সী প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে আমাদের অর্থায়ন করতে বলেছেন। আমরা সেখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে এডিবি অবশ্যই সেটি বিবেচনা করবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ক্ষেত্রেও এডিবি সহায়তা করতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আট বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি রয়েছে এডিবির। এই অঙ্ক আগের পাঁচ বছরের (২০১১-২০১৫) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। তবে যদি প্রয়োজন হয়, এর বাইরেও বাংলাদেশকে আমরা অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা দেব। সেটা চলমান প্রকল্প এবং নতুন প্রকল্পও হতে পারে। এমনকি সরকারের যে ১০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোতেও এডিবি বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে এডিবিও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে নানা জাটিলতায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ করে দেয়। এডিবিও আর পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী পদ্মার পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তাকিহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) বাড়াতে এডিবি অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ এবং নগর এলাকার উন্নয়নে ঋণ সহায়তা অব্যাহত রাখবে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়তেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেন এডিবি প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তবে এটি অনেক কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের যে জনসংখ্যা তাতে এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবছর গড়ে ৮ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তাছাড় লক্ষ্য অর্জনে ভালো বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশও প্রয়োজন বলে জানান তিনি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ৯০-এর দশকে জনসংখ্যাবহুল চীন গড়ে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আজ এই পর্যায়ে এসেছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রসংশা করে তিনি বলেন, গত অক্টোবরের পরে বাংলাদেশ প্রায় ছয় লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার যদি সহায়তা চায় সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা করতে এডিবি প্রস্তুত।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো কর্মসংস্থানের জন্য তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে করিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সফরকালে তিনি এডিবির সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এগুলোর মধ্যে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্প, ভৈরবের মাধ্যমিক স্কুল, নরসিংদীর নগর উন্নয়ন কর্মকাÐ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
তিন দিনের সফরে গত সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন এডিবি প্রেসিডেন্ট নাকাও। গতকাল বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। ১৯৭৩ সালে এডিবির সদস্য দেশ হওয়ার পর এ পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুক‚লে ঋণ, অনুদান ও কারিগরি সহায়তা বাবদ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
"