শারফুদ্দীন কাশ্মীর, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

হিমাগারের অভাবে কৃষকের কোটি কোটি টাকা লোকসান

সারা বছর সবজি উৎপাদন হলেও সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ নেই

চট্টগ্রাম জেলার কৃষিপ্রধান জনপদ মিরসরাই উপজেলা। যেখান থেকে দেশের যেকোনো স্থানে সহজে বহন করা যায় যেকোনো কৃষিপণ্য। বিশেষ করে উন্নত জাতের টমেটো, আলু, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন এ অঞ্চলের সেরা মৌসুমী সবজি। অথচ এখানে নেই কোনো হিমাগার। মিরসরাইয়ে এতো বেশি মৌসুমী সবজি উৎপাদিত হয় যে, এই অঞ্চলে একটি হিমাগার স্থাপিত হলে চট্টগ্রামের সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এদিকে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী দালালচক্রের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা মারাত্মক লোকসানের সম্মুখীন হয়।

১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে মিরসরাই উপজেলা গঠিত। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে কমবেশি সবজি উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন করা হয় ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন, খইয়াছরা ইউনিয়ন, মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন, জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন ও করেরহাট ইউনিয়নে। উপজেলায় সমতল জায়গার পাশাপাশি বর্ষাকালে পাহাড়ের পাদদেশে ঝিঙ্গা, সিসিঙ্গা, করলা, বরবটি, লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। সারাবছর মিরসরাই উপজেলায় সবজি উৎপাদন করলেও কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মূল্য থেকে। মিরসরাইয়ে ছোট-বড় মিলে অর্ধশত বাজার থাকলেও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য নেই কোনো স্বতন্ত্র সেড। বাজারের সব সেড থাকে ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য অনেকটা বাধ্য হয়ে কম দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।

প্রতি বছরের ন্যায় গেল অগ্রহায়ণ থেকে প্রতিদিন ভোরে মহাসড়কের পাশের ছোট বড় অন্তত ২০টি হাটে সবজির পাইকার হাট বসছে। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা থেকে পাইকাররা এসব হাট থেকে প্রতিদিন কৃষক থেকে শীতকালীন সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। উপজেলার সোনাপাহাড়, বারইয়াহাট, মিঠাছরা, বড়তাকিয়া, ছরারকূল, নয়দুয়ারিয়া, হাদিফকিরহাট, বড়দারোগারহাট, জোরারগঞ্জ অন্যতম হাট।

মিরসরাইতে স্থাপন করা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মিরসরাই ইকোনমিক জোন’। যেখানে ৩৫ হাজার একর জমিতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর কর্মীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রয়োজন খাদ্যের। মিরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান, মিরসরাই উপজেলায় মৌসুমী সবজি উৎপাদন হয় প্রায় ৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরও অন্তত কয়েক হাজার টন করে টমেটো, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, মুলা ও অন্যান্য মৌসুমী সবজি উৎপাদিত হয়। মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা মোটামুটি মূল্য পেলেও পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফলন পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করলে অনেকটা জলের দরে পাইকারদের হাতে সোপর্দ করতে হয়।

এই বিষয়ে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকার টমেটো চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনে এসেছি একটা হিমাগার হবে আমাদের আর সস্তায় বিক্রি করতে হবে না। কিন্তু এক পর্যায়ে পাইকাররা টমেটো পাঁচ টাকার বেশি দিতে চায় না। অথচ তখনো বাজারে ১৫ টাকার কম থাকে না। মৌসুমের পর তো ১০০ টাকাই খেতে হয় নয় মাস ধরে। অন্যান্য সবজিরও একই অবস্থা। মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করবো। একটি হিমাগার কোনোভাবে গড়ে উঠলে এলাকার সবার জন্যই মঙ্গল। অন্তত কাউকে ঝুঁকিপূর্ণ সবজি খেতে হবে না। এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত উত্তম ফলনই এলাকার ভোক্তাগণ পাবেন। আবার ভালো দামে অন্যত্র বিক্রিও সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist