নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮

‘প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধি’ নেই মজুরি বোর্ডে

সংশয়ে নেতারা

পোশাক শ্রমিকদের জন্য পুনর্গঠিত মজুরি বোর্ডে নিজেদের ‘প্রকৃত প্রতিনিধি’ না থাকায় তাদের স্বার্থরক্ষা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে এ খাতের শ্রমিকদের ১২টি সংগঠনের জোট গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতারা।

গতকাল ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে সেখানে এক সমাবেশে তারা এই শঙ্কার কথা জানান।

পোশাক শ্রমিকদের জন্য সবশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। কিছুদিন ধরেই নতুন করে মজুরি নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বোর্ড পুনর্গঠন করে সরকার। মজুরি বোর্ডের স্থায়ী চার সদস্যের সঙ্গে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধিকে যুক্ত করে পুনর্গঠিত মজুরি বোর্ডকে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একজন জেলা জজের নেতৃত্বে চার সদস্যের স্থায়ী মজুরি বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ ছাড়াও একজন নিরপেক্ষ সদস্য আছেন। স্থায়ী মজুরি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার।

ন্যূনতম মজুরিসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত ২০ জানুয়ারি পদযাত্রাসহ বেশকিছু কর্মসূচি ঘোষণা করে গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার বিজিএমই কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয় এই জোট।

বিজিএমইএর সামনে সমাবেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ‘মজুরি বোর্ড গঠন করা হলেও সেখানে প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা হয়নি। ফলে এই বোর্ড শ্রমিকদের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করবে তা নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে।’ মজুরি বোর্ড গঠনের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক নেতাদের ওপর নজরদারি শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ‘২০১৬ সালে সাভারে মজুরির দাবিতে সংগঠিত শ্রমিকদের ওপর কী নির্যাতন চালানো হয়েছে তা সবার মনে আছে। এখন নতুন করে গাজীপুর, আশুলিয়ায়, সাভারে শ্রমিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে হানা দিচ্ছে পুলিশ।’

সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘পোশাক কারখানার মালিকরা জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন করলেও শ্রমিকরা ন্যূনতম খাদ্যের অধিকারটুকু পাচ্ছেন না। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারমূল্যে কতজন মানুষের জীবনধারণ সম্ভব সে কথাটি কেউ ভাবছে না।’ পোশাক খাতের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এক মাসে যে বেতন পান, অনেক নারী শ্রমিক সারাজীবন চাকরি করেও তা পান না বলে অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেত্রী।

দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার টাকা মূল বেতন রেখে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণসহ বেশকিছু দাবি তোলা হয় সমাবেশে।

শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ শ্রমিকদের জন্য চাল, ডাল, তেল শিশু খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা, প্রতিবছর মূল মজুরির ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, অংশীদারিত্বমূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু ও ভেরিয়েবল ডিএ বা মহার্ঘ্য ভাতা চালু করা। সমাবেশ শেষে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এসব দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাস্টার মোখলেছুর রহমান, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে, ৯, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও মিরপুর শিল্পাঞ্চলে পদযাত্রা; ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান।

এছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাবির সপক্ষে ঢাকার শিল্পাঞ্চল ও শ্রমিক এলাকায় জনসংযোগের কর্মসূচিও রাখা হয়েছে।

আগামী ২ মার্চ সাভার আশুলিয়ায় পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist