নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

‘মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি একমুখী না হলে বোঝা’

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর ড. রঙ্গরাজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি একমুখী না হলে অর্থনীতির জন্য তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই অর্থনীতিকে কার্যকর রাখতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সংলাপ ও সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।’ গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় গভর্নর এ কে এন আহমেদ স্মরণে একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। ‘এ কে এন আহমেদ মেমোরিয়াল লেকচার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ফজলে কবির।

ড. রঙ্গরাজনের ভাষ্য, অতিরিক্ত চাহিদা থেকে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা থাকতে হয়। তবে সরবরাহ সংকট থেকে এটি তৈরি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা নিয়ে কিছু সন্দেহ জন্ম নেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যেখানে কৃষিজ উৎপাদন অনেকটা প্রকৃতির খামখেয়ালীর ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এ জাতীয় সরবরাহ সংকট অহরহ দেখা যায়। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়, তখন মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির যৌথ ভূমিকা দরকার। খাদ্য মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ হলে ও মূল্যস্ফীতির গ্রহণযোগ্য মাত্রা অতিক্রম করলে মুদ্রানীতিকে এভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে আর্থিক সম্পদের রিটার্ন প্রকৃতপক্ষে ধনাত্বক হয়।

বর্তমানে মুদ্রা বিনিময় হার ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. রঙ্গরাজন। তিনি জানান, উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত মুদ্রা বিনিময়ের হার ছেড়ে দেয় বাজারের ওপর। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন উন্নত বিশ্বে মুদ্রা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করার জন্য কখনো এককভাবে, আবার কখনো সম্মিলিতভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।

ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন বললেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুদ্রানীতির লক্ষ্যগুলো বিভিন্নভাবে বিধৃত হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বাংকের মূল লক্ষ্য হলো সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যকাঠামো স্থিতিশীল রাখা। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির একটি সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করে। তবে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যের জন্য রচিত মুদ্রানীতির সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের এই চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় সব দেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অধিকাংশ সরকারই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো যুক্তি হলো আর্থিক স্থিতিশীলতা যা কিনা আধুনিক দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক। কেবল কিছু দক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রানীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্ভব।

একসময়ের রাজ্যসভার সদস্য ড. রঙ্গরাজন মনে করেন, মুদ্রানীতির বড় সুবিধা হলো এটা যেকোনো পরিবর্তনে দ্রুত সাড়া দেয়। ক্রেডিট, অর্থের মূল্য ও প্রাপ্তিতে পরিবর্তন এনে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে মুদ্রানীতি। সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ে, তখনই মুদ্রানীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। এই অবস্থায় মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার লক্ষ্যের ব্যাপারে আরো স্বচ্ছ ও বহির্মুখী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ড. রঙ্গরাজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, যেটা বেশি প্রয়োজন তা হলো প্রচলিত নিয়ম ও বিচারিক বিচক্ষণতার সুন্দর সমন্বয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য যেমন মূল্য স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি। এর মধ্যে মূল্য স্থিতিশীলতার লক্ষ্যটি বেশি জোরালো হতে হয়। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য এক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সাধারণ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে এর অন্য লক্ষ্যগুলোও মধ্যমেয়াদে অর্জিত হতে পারে।

ড. রঙ্গরাজন চক্রবর্তী ছিলেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ১৯তম গভর্নর। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আর রাজ্যসভার সদস্য পরিচয় দুটিও ছিল তার নামের সঙ্গে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist