আব্দুল আজিজ, হিলি (দিনাজপুর)
চাকাভিত্তিক শুল্কায়নে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি : কমছে রাজস্ব
দেশের সব বন্দরে চাকাভিত্তিক শুল্কায়নের নিয়ম চালু করা হয় শুল্ক ফাঁকি রোধের জন্য। কিন্তু এ নিয়মের জন্য উল্টো রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। সাড়ে চার বছর ফল ও আট মাস ধরে আরো কয়েকটি পণ্যের আমদানি বন্ধ থাকায় হিলি বন্দরের শুল্ক বাবদ কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার। ব্যবসায়ীরা জানান, এ নিয়মের আওতায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকার সংখ্যাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ হিসাব করে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয় বলে তাদের দাবি।
ব্যবসায়ীরা জানান, শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা, রসুন, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি মাছ, টমেটো ও পান আমদানির ক্ষেত্রেও গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্ক আহরণের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ কম থাকলেও নির্দিষ্ট সøাব অনুযায়ী শুল্কায়ন করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরে ফল আমদানিতে শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তাদের একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানিতে গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের নির্দেশ দেয় এনবিআর। হিলি স্থলবন্দরে নিয়মটি এখনো চালু রয়েছে। অথচ শুল্ক ফাঁকির ঘটনাটি সোনা মসজিদের হলেও পরবর্তীতে এ স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে জারিকৃত নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ফের দেশের সব স্থলবন্দরে গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণের নির্দেশনা দেয় এনবিআর। এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সাল থেকেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ রেখেন ব্যবসায়ীরা। ওই বছর চালু হওয়া নিয়মে ছয় চাকার গাড়িতে ১৪ টন, ১০ চাকার গাড়িতে ১৮ টন ও ১২ চাকার গাড়িতে ২০ টন পণ্য হিসাব করে শুল্কায়নের নির্দেশ দেয় এনবিআর। সাম্প্রতিক সময়ে চাকা অনুযায়ী পণ্যের ওজনের হিসাব আরো বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এ ব্যাপারে নতুন একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সে অনুযায়ী, ৬ ও ১০ চাকার গাড়িভেদে কমলা, কিনু ও মাল্টা আমদানিতে যথাক্রমে ১৬ ও ২০ টন, আঙুর আমদানিতে ১৭ ও ২০ টন, বেদানা ও আপেল আমদানিতে ১৭ ও ২৪ টন এবং আম আমদানিতে ২০ ও ২৪ টন পণ্য হিসাব করে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা, রসুন, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি মাছ, টমেটো ও পান আমদানির ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি চালু করা হয়। ফলে আট মাস ধরে এসব পণ্যের আমদানি আগের তুলনায় পরিমাণ একেবারেই নগণ্য।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. হারুন-উর-রশীদ জানান, একজন আমদানিকারক একটি ছয় চাকার গাড়িতে পাঁচ টন ফল আমদানি করলেও নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ টন পণ্যের শুল্ক দিতে হচ্ছে তাকে। তিনি দাবি করেন, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটলেও হিলিতে এমনটি কখনো হয়নি। এ কারণে রাজস্ব আহরণের স্বার্থে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের পদ্ধতি শিথিল করা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. মশিয়ার রহমান ম-ল বলেন, বন্দর দিয়ে ফলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এনবিআর কর্তৃক গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের যে নির্দেশনা রয়েছে, আমরা সে অনুযায়ীই শুল্কায়ন করে পণ্য ছাড়করণ করছি।
"