তারুণ্য ডেস্ক

  ১২ জুলাই, ২০১৭

তরুণদের অনুপ্রেরণা জীবন জয়ী নিকোলাস

একটি শিশু যদি হাত কিংবা পা ছাড়া জন্মগ্রহণ করে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়। কোনো হাত নেই কাউকে জড়িয়ে ধরার, কারো হাতের একটু স্পর্শ পাওয়ার অথবা কারো হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। বলুন তো সেই মানুষটির যদি কোনো পা না থাকে, তাহলে কী হতে পারে। চিন্তা করে দেখুন সেই মানুষটির কথা।

১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একটি হাসপাতালে এক আজব শিশুর জন্ম হয়েছিল যার নাম নিকোলাস। পুরো নাম নিক বোয়েসিস। নিকের জন্মের পূর্ব মুহূর্তে তার বাবা-মা স্বপ্ন দেখেছিল, তাদের আদরের সন্তান জন্ম হবে আরো দশটি শিশুর মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু নিকের জন্মের পর নিকের মা যখন তার আদরের সন্তানকে প্রথম স্পর্শ করেছিল, তখন নিকের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। কারণ এ রকম অস্বাভাবিক সন্তান কারো কাম্য নয়। এভাবেই নিক এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বড় হতে থাকে। যেহেতু নিক ছোটবেলা থেকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বেড়ে উঠেছিল, সুতরাং কেউ কোনো দিন কল্পনা করতে পারেনি বিকলাঙ্গ এই সুন্দর শিশুটি এক দিন পৃথিবীর সব মানুষকে অন্যভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার আহ্বান জানাবে।

নিকের বয়স যখন সাত বছর স্কুলের সেই দিনগুলোতে নিক তখন চরম হতাশ হয়ে কৃত্রিম অঙ্গপতঙ্গের কথাও একবার ভেবেছিলেন। কারণ কিশোর নিক তখন অন্য দশটি শিশুর মতো চলাফেরা করার নেশায় মত্ত ছিলেন। নিকের দেহে ইলেকট্রনিকস অঙ্গপতঙ্গের ট্রায়াল করা হয়েছিল, কিন্তু সেখানেও বাধল বিপত্তি। কারণ নিক সেসব ভারি অঙ্গপতঙ্গ নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারত না। অসহায় নিক কৃত্রিম অঙ্গপতঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। নিক পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশায় তার বিকলাঙ্গতাকে পুঁজি করে স্বপ্ন দেখতে লাগল বড় হতে হবে, কিছু করতে হবে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।

এভাবেই নিক যখন বড় হতে লাগল, তখন সে তার বিকলাঙ্গতাকে জয় করতে শিখল। নিক তার সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার জন্য নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য পথ বের করতে লাগল। দুই হাত এবং দুই পা না থাকলেও নিক নিজে নিজেই বের করল কিভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে, চুল সুন্দর করে আঁচড়াতে হবে, কম্পিউটারে ব্রাউজ করতে হবে, সাঁতার কাটতে হবে। নিক এখন নিজের মতো করে অনেক কিছুই করতে পারে। নিকের জীবনে এভাবেই সফলতা আসতে লাগল যখন সে সব অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখল। স্কুলে নিক যখন ক্লাস সেভেনে উঠল তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হলো। একই সঙ্গে নিক স্টুডেন্ট কাউন্সিলর হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরু করে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে লাগল এবং বিকলাঙ্গ শিশুদের সমস্যা সমাধানে উৎসাহ ও প্রেরণাদায়ক বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে শুরু করল। স্কুলের আঙিনা শেষ করে নিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করল ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের জন্য। নিক অর্থনীতি ও অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ডিগ্রি গ্রহণ করল মাত্র উনিশ বছর বয়সে। এরপর নিক তার স্বপ্ন সফল করার জন্য এবং বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সেমিনার, সভায় মটিভেশনাল বক্তব্য এবং নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনাগুলো গল্প আকারে উপস্থাপন করতে শুরু করল। নিক বলত, আমি আমার বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পেয়েছি আমার স্বপ্নের মধ্যে। আমি ভাবতাম, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কিভাবে সফল হতে হবে। নিক বিশ্বাস করত- জীবনে সফল হওয়ার জন্য একটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হচ্ছে Attitude. অতএব জীবন সংগ্রামে সফল হতে হলে Attitude সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ শুনেছে নিকের কথা, নিক অকপটে বলেছেন তার জীবনের বয়ে চলা সংগ্রামের কথা। নিক বিভিন্ন বয়সের মানুষকে বিশেষ করে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, যুবক, ব্যবসায়ী, নারী-পুরুষসহ সবাইকে উদ্দীপিত করেছেন, উৎসাহিত করেছেন, স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন। নিককে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, টেলিভিশন চ্যানেল। নিককে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র। নিক তার কর্মকা- পরিচালনা করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে দেখা করা এবং আলাপ করার সুযোগ পেয়েছেন। নিক সবাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, যেকোনো সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন তা সমস্যা হিসেবে না দেখে সুযোগ হিসেবে দেখলে সব দুর্ভেদ্য সমস্যাও অতিক্রম করা সম্ভব। তবেই জীবনের সার্থকতা। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে নিক আমাদের জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার জীবন্ত এক কিংবদন্তি নায়ক। জয় হোক নিকের, জয় হোক পৃথিবীর সব স্বপ্নবাজ তরুণের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist