কাজী বর্ণাঢ্য
ফেরা
বেরিয়েছি পথে
ভারী ভারী যান আর মানুষের কোলাহলে একা
দেখছি পাথর ভাঙা, করাত কলে চেরায় হওয়া মানুষের দুঃখপাত
হাঁটছি
ভাবনা ধোঁয়া ফুঁকে বিকেল গড়ায়
ক্রমশ সভ্যতার পোশাক খুলে সন্ধ্যা
গুন্ডাদলের মতো অন্ধকারের ঝাঁক
সকলের ফিরে যাওয়া।
আমাকে হারিয়ে পথ
সামনের অন্ধকারে
তারপর নির্জন অরণ্যে
হাঁটছি, ক্লান্ত
কোথাও জিরিয়ে ফ্রি টেপের এক চুমুক শান্তি।
পাখি ঘরে ফিরে অভুক্ত ছানা মাথা তুলে আছে
হাতের মোহন বাঁশি থামিয়ে রাখাল ফিরে
গরুর মতো দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় ব্যর্থতার শব
নিঃশব্দ বাঁশির কলিজায় দীর্ঘশ্বাসের ঘনিষ্ঠ রাগ
এবার ভালো ফলন না হলে
বন্ধ হবে মহাজনের হিসাব
চায়ের কেটলি গুছিয়ে ফিরে দোকানদার মামা
ছেঁড়া পুঁটলায় পচা পাঙ্গাস
সংসারের অনেক চোখ এই পুঁটলার ভেতর
পুরুষকে ঠান্ডা করে বারবণিতার তাড়াহুড়ো
শিশুটি ক্ষুধায় সজাগ।
আলো আর অমাবস্যা গুলিয়ে এলোমেলো হাঁটছি
পথ আমাকে ফিরিয়ে নেয় না
সকলের ফেরা দেখি
আমার ফেরার পথে কাচের বাঁধা
কাচের ভিতর নিজেরই মরা মুখ
শিশুটি আজ কত বড় হলো
কেমন আছে মা
বৌটাও বন্ধুদের মতো জড়িয়ে গেছে স্বার্থপরতার প্যাঁচে
কপালে জমে থাকা হতাশা মুছে হাঁটছি
আমার কবে ফেরা হবে।
ফেরা মানেই তো কণা কণা স্বপ্নের বহুতল ভবন
ফেরা মানেই বাজারের ব্যাগ
চাল ডাল তেল নুন
ফেরা মানেই বিদ্যুৎ বিল
বাড়িওয়ালার দাম্ভিকতা
শিশুর হাতে তুলে দেওয়া আনন্দ প্যাকেট
অনেক অনেক খেলনা
ছবিওয়ালা ঝলমলে বই
ফেরা মানে তেল সাবান কসমেটিকস
মায়ের প্রিয় পান আর কাঁচা সুপারি
দীর্ঘশ্বাস তছনছ আর অন্ধকার
ফেরার সময় হলে
পথের পাগল...
"