দীপিকা ঘোষ

  ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

মরণ থেকে জীবনে

‘ডিসকভারি অব মাই লাইফ পোয়েম’ বেস্ট সেলার বুক হিসেবে স্বীকৃতি পেল বিশ্বসাহিত্যে। লেখক একজন ম্যারিন সৈন্য। ভূমিকায় বলেছেন, ‘লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল না কখনো। এখনো নেই। কিন্তু এরপরও লিখতে হলো। কারণ, বইটি লেখার জন্যই আমার নতুন জন্ম হয়েছিল। এই গ্রন্থের ঘটনাগুলো মূলত আমার জীবনের এমন একটি মুহূর্তকে নির্ভর করে পল্লবিত হলো, যা আমার নতুন জন্মলাভের বাস্তব কাহিনি; জীবন-বেদনার অতল থেকে যাকে আমি আচমকাই আবিষ্কার করেছিলাম জন্ম-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমার হাতে তখন গুলিভর্তি রিভলবার। ট্রিগারের ওপর বুড়ো আঙুল সব হিসাব-নিকাশের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হয়ে চাপ দেওয়ার অপেক্ষায় তখন। হঠাৎ অসম্ভব এক অলৌকিক দৃশ্যচিত্রের মতো বিদ্যুৎবেগে ঘটে গেল সেই ঘটনাটি, যাতে জীবনের অনাবিষ্কৃত চিরন্তন সত্যকে আমি প্রত্যক্ষ করলাম। এই সত্য হলো সেই কবিতা, যে কবিতা আমাকে নতুন জীবনের মন্ত্রে দীক্ষিত করে আমায় সৃষ্টি করল নতুনভাবে।’

ম্যারিন সৈন্য জো কার্টাইল আত্মহত্যা করতে গিয়ে প্রথমবার জীবনের ভাঁজে ভাঁজে অনন্যসাধারণ এক সৌন্দর্যের সঞ্চারণকে দেখতে পেলেন অকস্মাৎ। আত্মহত্যা করতে যাওয়ার মোক্ষম মুহূর্তে ধরা পড়ল তার প্রত্যক্ষ অনুভবে, প্রতিটি জীবনই ঈশ্বরের একেকটি অনবদ্য কবিতার অন্তরাল, যা প্রয়োজনে আপনা থেকেই উন্মোচিত হয়ে পড়ে। নিজের স্ত্রী এলা কার্টাইলকে অত্যন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে ভালোবেসেছিলেন জো। আফগান যুদ্ধে গিয়েছিলেন ২০০২ সালে। ফিরে এসে দেখেন, তার ভালোবাসার বাগান বিধ্বস্ত হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার প্রলয়ঝড়ে। এলা কার্টাইল নিজেকে সম্পূর্ণ জড়িয়ে ফেলেছে স্কুললাইফের ‘সুইট হার্ট’ জোসেফ ডেভিডের সঙ্গে। ডেভিডের সন্তানের জন্ম দিতে চলেছে এলা। বিশ্বস্ত প্রেমের এই পরিণতিকে মানতে পারেননি জো। আত্মবিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন ‘ওয়াবাস নদী’র বনাঞ্চলের নির্জন তীরে, যেখানে আরো একটি জীবনের যবনিকা ঘটতে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই।

একটি ছোট্ট লিজার্ড (গিরগিটি)-কে হিং¯্রগতিতে তাড়া করে ফিরছিল একটি বন্য, ক্ষুধার্ত কয়োটি (আমেরিকান খেঁকশিয়াল)। গিরগিটি ছুটছিল হাওয়ার বেগে, যেভাবে মৃত্যু পেছনে ধেয়ে এলে জীবন বাঁচাতে অস্থির হয়ে ছোটে কেউ। ছুটতে ছুটতে তার সামনেই তখন বিস্তীর্ণ নদীর বুক। হাওয়ার স্পর্শে তরঙ্গ উঠছে উদ্দাম হয়ে। তারই মধ্যে দুর্বার বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। কেননা, তার তখন জানা নেই, এক মৃত্যুর স্পর্শ থেকে আরেক মৃত্যুর আলিঙ্গনে ধরা দিয়েছে সে। জো কার্টাইল এই বিরল দৃশ্যের প্রত্যক্ষ দর্শক হতে গিয়ে অজান্তেই কানের পাশ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন গুলিভরা রিভলবার। দেখছেন, লেজে ভর করে সাধ্যকে অতিক্রম করে জলের তরঙ্গেও গিরগিটি ছুটতে ছুটতে লাফিয়ে উঠল শেষবার, যেখানে একটি উইলোগাছের ডাল ঝুলে ছিল জলের বুক ছুঁয়ে থেকে।

জো কার্টাইল উপসংহারে লিখেছেন, ‘সেই মুহূর্তে গিরগিটির জীবনের অনবদ্য কবিতায় আমি নিজের জীবনের কবিতাকেও আবিষ্কার করে ফেললাম। দেখলাম, তার মতো আমার মনেও জেগে উঠেছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, আমার তরুণ জীবনকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য যা প্রসারিত আছে জল ছুঁয়ে থাকা ওই উইলোগাছটির মতোই, যে উইলো আমার কাছে আবারো এক নারীর ভালোবাসা, যার জন্য প্রেমিক পুরুষ অপেক্ষা করে জীবনভর।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist