reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ নভেম্বর, ২০১৯

স্বপ্নের ভেতর হাসির শব্দ

দুপুরের খাবার বিরতির পর আবার কাজ শুরু করতে মোবারকের বরাবরই আলস্য বোধ হয়; অন্তত আধঘণ্টা, মোবারক যাকে বলে ‘ঝিমানো’। এ অবস্থায় আধোঘুম সেরে নেয় আপিসে নিজের ছোট্ট টেবিলে মাথা রেখেই; সহকর্মীরা এ নিয়ে যথেষ্ট হাস্যঠাট্টা করলেও মোবারক অবিচল।’ এভাবেই শুরু হয়েছে মাহবুব আজীজের উপন্যাস মন্ত্রজাল। শহরকেন্দ্রিক, সমকালীন এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মোবারক, যার মধ্যে আছে হতাশা, না পাওয়ার কষ্ট। পাশাপাশি উচ্চাকাক্সক্ষা, বড় হওয়ার আশা। তবে সে সৎ, কর্মঠ, কাজের প্রতি নিবেদিত। তারুণ্যে ভরপুর।

সবমিলে মাহবুব আজীজ এ চরিত্র সৃষ্টিতে দক্ষতা ও নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে ফেসবুকে হায়চিল ছদ্মনামে ধনাঢ্য, সুন্দরী, বিবাহিত মহিলা বিদিশার সঙ্গে প্রেম-পর্ব বা ব্যক্তিগত কথন কখনো আরোপিত মনে হয়নি। বরং একটি মিষ্টি আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। যেমন ‘সব সময় গরিব গরিব করবে না তো! এটা হীনম্মন্যতা। ঝেড়ে ফেলো বাজে চিন্তা।

‘আচ্ছা যাও, ঝেড়ে ফেললাম। সব সময় ভাবব, আমি একটা বিরাট ধনী। পৃথিবী আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

‘বিরাট ধনী ভাবার দরকার কী? বিরাট মানুষ ভাব নিজেকে; তাইলেই চলবে।’

‘আচ্ছা, এখন থেকে আমি বিরাট একজন মানুষ। আর তুমি তো আগের থেকেই বিরাট মানুষ। তা, মিস বিরাট মানুষ, ঘুমাতে টুমাতে হবে না?’

‘একদিন না ঘুমালে কী হয়? বিদিশা বলে।’

এভাবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কথা বলে গেছে দুজন পিপাসিত নর-নারী। কিন্তু কখনো বিচ্যুত হয়নি। এ কৃতিত্ব লেখকের। লেখকের সংযম বোধের কারণে সুপাঠ্য থেকেছে। আদি রসাত্মক রূপে রূপ নিতে পারত, তা নেয়নি; লেখক আবেগের সুতো টেনে ধরেছেন। পরিচ্ছন্ন ও মার্জিতভাবে গল্পকে টেনে নিয়েছেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।

প্রকৃত প্রস্তাবে মন্ত্রজাল কৌশলগত অপ্রেমের কাহিনি, হৃদয় নৈকট্যের টানাপড়েন। যার যার শিবপূজা চলতে থাকে ভেতরে ভেতরে। কখনো মনে হবে, নিজ নিজ জায়গায় থেকে দুজনই ভাবছেÑ ‘ভালোবাসা দিতে পারি, তুমি গ্রহণে সক্ষম?’

আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ফেসবুক প্রায় প্রত্যেক মানুষের অনেকটা সময় দখল করে নিয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের। তাই মোবারকের মতো অনেকের জীবনে এ ধরনের ঘটনা আছে। কাজেই পড়তে গিয়ে গল্পটাকে পাঠক নিজের গল্প ভাবতে শুরু করবে। এই যে পাঠকের ভেতরে ঢুকতে পারা, কম লেখকের পক্ষে সম্ভব, সেক্ষেত্রে মাহবুব আজীজ সহজেই ঢুকতে পেরেছেন, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়।

গল্প, উপন্যাস বা যেকোনো গদ্যসাহিত্যে হিউমারের উপস্থিতি সে লেখাকে দৃঢ়তা দেয়, মজবুত করে। অপরদিকে পাঠকও কিছুটা রিলিফ পায়। আলোচিত উপন্যাসেও হিউমারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন ‘বাব্বা, বিরাট প্রেম মনে হচ্ছে। লিখছেন আর লিখছেন। কোনো দিকে হুঁশ নেই। তা মেয়েটা কে?’

‘মেয়ে এলো কোত্থেকে? একটা গাছের ছবি দেখলি না। গাছের সঙ্গে কথা বলছি।’

‘আপনি আমাকে ভাবেন কী! গাবগাছ? সত্যি করে বলেন, মেয়েটা কে? লুকিয়ে লুকিয়ে জল খাচ্ছেন। বেশ।’

‘তুই গাবগাছ না, বটগাছ; ঠিকাছে! তা বটগাছ, আপনার খবর কী? কটা ছেলেকে নাকামি-চুকামি খাওয়াচ্ছিস?’

এ কথন মোবারকের সঙ্গে কলেজপড়–য়া মামাতো বোন রিনির। এখানে রিনির চরিত্রটা আরেকটু বিস্তার লাভ করতে পারত বলে মনে হয়।

সবশেষে বলা যায়, লেখকের ভাষা, মনন, যুক্তি পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, উপন্যাসরসে আগাগোড়া ডুবিয়ে রাখার অভূতপূর্ব গুণটি সার্থকতার দাবি রাখতে পারে।

বইটি প্রকাশ করেছে কথা প্রকাশ। নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছে ধ্রুব এষ। ১২০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ২০০ টাকা।

* সৈয়দ নূরুল আলম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close