হিমেল আহমেদ

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

বুকার কেন প্রথা ভাঙল?

সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদার পুরস্কার ম্যান বুকার। প্রতি বছর হাজারো লেখকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একজনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কারের সম্মানী তো আর কম নয়! ৬৩ হাজার ডলার। বুকার সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর শুধু একজন লেখকই এই পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু এ বছর ঘটেছে উল্টো! স্বয়ং বুকার প্রাইজ কমিটি একই সঙ্গে দুজন লেখককে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে; যা ঘোষণা হওয়া মাত্রই বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে গেছে।

ম্যান বুকার সংস্থার রুলস ও ট্রাডিশনের বাইরে গিয়ে তৃতীয়বারের এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন বুকারের বিচারকরা। এই বছর অর্থাৎ বুকার পুরস্কার ২০১৯ পেয়েছেন কানাডীয় ঔপন্যাসিক মার্গারেট অ্যাটউড ও ব্রিটিশ লেখক বার্নাডিন এভারিস্তো। অবশ্য তাদের প্রাইজমানি ভাগাভাগি করে নিতে হবে। কিন্তু বুকার কেন তাদের আদি এই প্রথা ভাঙল? বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুকার পুরস্কারের বিচারকরা খুব চেষ্টা করেছেন এবারেও যাতে বুকার পুরস্কারের রীতিনীতি রক্ষা করা যায়। কিন্তু তারা বলেছেন, দুজনের কাজকে তারা আলাদা করতে পারছেন না। ৬০ বছর বয়সি এভারিস্তো প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বুকার জিতলেন। অন্যদিকে সবচেয়ে বয়স্ক বুকারজয়ী হয়েছেন ৭৯ বছর বয়সি মার্গারেট অ্যাটউড। বিচারকদের ভাষ্যমতে, এই দুই নারী সমানভাবে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাই দুজনকেই এই পুরস্কার দেওয়া হলো।

টেস্টামেন্টস সিরিজের ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেল’ উপন্যাসের জন্য মার্গারেট অ্যাটউডকে এবং ‘গার্ল, ওম্যান, আদার’ বইটির জন্য বার্নাডিন এভারিস্তোকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। মার্গারেট অ্যাটউড কানাডার একজন নামকরা ঔপন্যাসিক। তাছাড়াও তিনি কবি, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, উদ্ভাবক, শিক্ষাবিদ ও পরিবেশবাদী। মার্গারেট ১৭টি কবিতার বই, ১৬টি উপন্যাস, আটটি ছোটগল্প সংকলন এবং একটি গ্রাফিক উপন্যাসসহ একাধিক ছোট কবিতা ও কথাসাহিত্যের সংস্করণ প্রকাশ করেছেন। সবচেয়ে বয়স্ক ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি বুকার পুরস্কার পেলেন। তবে এটি তার দ্বিতীয় বুকার পুরস্কারপ্রাপ্তি। ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘দ্য ব্লাইন্ড অ্যাসাসিন’-এর জন্য ২০০০ সালে প্রথম বুকার পুরস্কার পান। তার উপন্যাস ও কবিতায় দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন। যেমনÑ ভাষার ক্ষমতা, লিঙ্গ পরিচয়, ধর্ম ও পুরাণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্ষমতার রাজনীতি। মার্গারেট অ্যাটউড ছোটবেলা থেকে পৌরাণিক ও কল্পকাহিনির প্রতি ব্যাপক আসক্ত ছিলেন এবং তার অনেক কবিতা এগুলো থেকেই অনুপ্রাণিত। কানাডীয় সাহিত্যে তার অবদানের মধ্যে অন্যতম হলো তিনি গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ ও রাইটার্স ট্রাস্ট অব কানাডার প্রতিষ্ঠাতা।

বুকার পুরস্কারের আরেকজন ভাগিদার বার্নাডিন এভারিস্তো, যিনি একজন ব্রিটিশ লেখিকা। লন্ডনে থাকেন। তিনি অসংখ্য সংক্ষিপ্ত কল্পকাহিনি, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য সমালোচনা এবং মঞ্চ ও রেডিওর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। তার আটটি বই পুরস্কার পেয়েছে। যে গল্পগুলোর অধিকাংশ বিবিসি রেডিওতে প্রচারিত হয়েছে। এভারিস্তো বর্তমানে ব্রুইল ইউনিভার্সিটি লন্ডনের ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর প্রফেসর। জড়িত রয়েছেন থিয়েটার ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সঙ্গে। বার্নাডিন এভারিস্তো প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ঔপন্যাসিক, যিনি বুকার প্রাইজ পেলেন। ‘গার্ল, ওম্যান, আদার’ উপন্যাসটি মূলত ব্রিটেনের কালো নারীদের নিয়ে লেখা। সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিবন্ধকতা ও যৌনতা নিয়েও বেশ খোলামেলা বিশ্লেষণ করেছেন লেখক এই উপন্যাসে। সমকামীদের নিয়ে তার বই ‘দ্য লাভারম্যান’ খুব বিখ্যাত বই। এ ছাড়া ব্লোন্ড রুটজ, হ্যালো মম, লারা, সউল ট্যুরিস্ট, দ্য এমপোরিয়ারস বেবিসহ অসংখ্য বিখ্যাত উপন্যাসের রচয়িতা তিনি। এভারিস্তো সর্বদাই অসহায়, সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে লেখার চেষ্টা করেন। যা আমরা তার উপন্যাসগুলোতে পাই। আফ্রিকার নিরীহ মানুষদের নিয়ে কাজ করার প্রচ- ইচ্ছে তার। তিনি চান এই পৃথিবীর সবাই বর্ণ, গোত্র ভুলে একই সমতায় আসুক।

বুকার কমিটির বিচারকরা বহু চেষ্টা করে এই দুই মহান লেখককে আলাদা করতে পারেননি। তাই তাদের আদি প্রথা ভাঙতেও তারা রাজি হয়েছেন। মার্গারেট কিংবা এভারিস্তো এই দুই লেখক শুধু সাহিত্যের জন্য নয়, পৃথিবী ও সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা নিজেদের চিন্তাধারা, মত, আগ্রহ সাহিত্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবেই সুস্থ চিন্তাধারা আর মতামতের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর হবে, দেশ সুন্দর হবে, পৃথিবী সুন্দর হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close