মিরন মহিউদ্দীন

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শতবর্ষে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

মনের জানালা ধরে

বাঙালির কাছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নিছক একজন জনপ্রিয় গায়ক বা সফল সুরকার নন, তিনি আমাদের হৃদপুরের এক অনন্ত অনুভব। দশকের পর দশক তার কণ্ঠে বাঙালি খুঁজে পেয়েছে তার নিজের জীবনের কত না বলা কথা, হারিয়ে যাওয়া প্রেম, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে। এই হেমন্ত অনিঃশেষ এক সুরের আকাশ। শতবর্ষে শিল্পীকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা।

শোনো, কোনো এক দিন

১৯২০ সালের ১৬ জুন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। ১৯৩৫ সালে প্রথম বেতারে তার গান পরিবেশন আর ১৯৩৭ সালে ‘কলম্বিয়া রেকর্ডস’ থেকে বাংলা গানের রেকর্ড প্রকাশ। আর ১৯৪০ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাকÑ তারপর কত গান, কত সুর। বাংলার স্বর্ণযুগের অন্যতম স্থপতি হয়ে গেলেন তিনি। আর সেই সুরের ধারায় ডুবে গেল, ভেসে গেল এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম।

পটে আঁকা ছবিটি

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান যদি কালানুক্রমিক আমরা শুনি, বাংলা গানের সুর আর তার চলনের বিবর্তন খুব সহজে বুঝতে পারব। আমি সংগীতজ্ঞ নই, শ্রোতা মাত্র। তবু বুঝতে পারি, বাংলা গানের সুর উপস্থাপনের পরিবর্তন; আধুনিক বাংলা গানের আধুনিক হয়ে ওঠার পথচলাটি।

১৯৫৩ সাল, পরেশ ধরের কথায় ও সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রকাশিত গান ‘শান্ত নদীটি’। গানটির কথায় ও সুরে ধরা পড়ে গ্রামবাংলার ছবি। নদীর শান্তি, হাওয়ার স্থিরতা, জলের আয়নার মতো স্বচ্ছতা সব কিছুতেই হেমন্ত বাবু তার গানে তুলে ধরেছেন বাংলার প্রকৃতির কথা মাথায় রেখেই। সুরে গান গায়ন ভঙ্গিতে একটা মৃদু চলন রয়েছে। কিন্তু ঠিক তার এক বছর পরের ছবিটা যদি দেখি, অর্থাৎ ১৯৫৪ সাল, দিলীপ সরকারের কথায় ও সুরে হেমন্তবাবু রেকর্ড করলেন, ‘কে যায় সাথীহারা মরু সাহারায়’। গানটির মধ্যে একটা অদ্ভুত চলন। কখনো তা উঠেছে চড়ায়, কখনো নামছে খাদে। সুরের মধ্যে ওয়েস্টার্ন মিউজিকের ছায়া। এমনকি, গানের উপস্থাপনের ভঙ্গিতেও বিশাল তারতম্য। অথচ এ দুটো গানের মধ্যবর্তী সময় মাত্র এক বছর। যদিও অনেকেই হেমন্তবাবুর প্রথম দিকের গানে পঙ্কজ মল্লিকের গায়নভঙ্গির ছায়াপাতের কথা বলেছেন। তবে হেমন্তবাবু তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘এই সময় থেকে আমি আমার গানের স্টাইল সম্পর্কে সচেতন হলাম। গোড়াতে আমি পঙ্কজদাকে অনুকরণ করে গান গাইতাম। সেই ছাপাটাই আমাকে এত দিন এগিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আর তো পরের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো চলে না। নিজের পোশাক না হলে চিনবে কি করে লোক? তাই নিজস্ব একটা ভঙ্গির দিকে নজর দিলাম।’ এখন কোন সময় সেটি? হেমন্তবাবুর কথায় সেটি ১৯৪০। তবে যত দিন গিয়েছে উনি যেন বদলেছেন নিজেকে। বদলেছেন ওর গান গাওয়ার স্টাইল।

১৯৬০ সাল উনি নিজের সুরে গান গাইলেন, ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে’। এই প্রথম দেখলাম ‘কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো?’ বলার সময় ‘হাসো না তো’ বলার ঠিক আগে একটা পজ [চধঁংব] দিলেন এবং ইন্টারল্যুডও থেমে যায় সেখানে, বাজে না, কোনো নেপথ্যের সুর। খেয়াল করলে দেখব, এই গানের অন্তরা, আভোগে প্রতিটি অভিমান প্রকাশের আগে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নীরবতা। অভিমান প্রকাশের আগে সত্যিই তো আমরা কেমন নীরব হয়ে যাই। আসলে, মন কী বলবেÑ বুঝে উঠতে পারি না বলেই তো এই অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। অনেক না বলা কথা, না ফেলা চোখের জল বাস করে এই নৈঃশব্দের ভেতর। আর হেমন্তবাবু তাকেই কী অনায়াসে বোঝালেন তার গানে। আর তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬১ সালে রতœ মুখোপাধ্যায়ের সুরে তিনি গাইলেন দুটি গান। এক. ‘বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা’। গানটি শুনে বোঝা যায় একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার প্রতি মুগ্ধ হয়ে বিস্ময়ে তাকে মেলাতে চাইছেন, কীভাবে মেলাবেন তাই যেন তিনি মেলাতে পারছেন না যথাযথভাবে। আর সেই অনুভবে গাইছেন হেমন্তবাবু।

আর ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬২ সালে নচিকেতা ঘোষের সুরে উনি গাইলেন, ‘তারপর? তার আর পর নেই’। বাংলা গানে এহেন আধুনিকতা আগে চোখে পড়েনি। গানটি তিনি গেয়েছেন চান্দ ওসমানির সঙ্গে। কিন্তু প্রথাগত দ্বৈত সংগীত বলতে আমরা যা বুঝি, এ গান তা নয়। শুধু স্থায়ী থেকে অন্তরা, অন্তরা থেকে থেকে সঞ্চারীর চলনে সেতু হয়ে বেজে গিয়েছে চান্দ ওসমানীর কণ্ঠ। তাতে একটিই শব্দ ‘তারপর’? যেন নাটকীয় কোনো সংলাপ উঠে এলো গানের ইন্টারল্যুড হয়ে। আর বাকিটুকু জুড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানে ঝরে পড়ছে প্রেম।

আর অন্ত নাই গো নাই

তবে, আধুনিকা বা চিত্রগীতি নয়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এক নতুন মাত্রা এনেছিলেন রবীন্দ্রসংগীতেও। একবার যদি অতীতের দিকে তাকাই, সেই পঞ্চাশ বা ষাটের দশক, সেসময় রবীন্দ্রগানের ঘরানায় বড় বেশি বিশ্বভারতীয় ছোঁয়া, রীবন্দ্রসংগীত খাওয়ার সময় এস্রাজ বাজবে; হারমোনিয়াম বাজা কতটা যুক্তিসংগত, এ নিয়ে শৈলজারঞ্জন মজুমদার ও শান্তি দেব ঘোষের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছিল, বিভিন্ন বইপত্রে লেখায় তার উল্লেখও আছে। রবীন্দসংগীত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সেসময় একটা ধরাবাধা প্রথাকেই অনুসরণ করা হতো। যদিও ১৯৮৪ সালে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ‘গানের ঝর্ণাতলায়’ গানটি যেভাবে গেয়েছিলে, তাতে কোথাও প্রথানুসরণ নয়, বরং ধরা পড়েছিল শিল্পীর স্টাইলের নিজস্বতাই। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেন সেই ধরাটিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাই তার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে যে অভিনবত্বটি ছিল, অন্য কোনো শিল্পী সেটা গাইলে কোথাও যেন অপূর্ণ মনে হতো কিংবা আজও মনে হয়। যে কারণে আজও বিশেষ কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীতের প্রসঙ্গ এলেই মনে পড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম; ঠিক কেন আর কীভাবে এই রবীন্দ্রনাথের গানগুলোর সমার্থক হয়ে উঠেছেন হেমন্তÑ তা খুব স্পষ্ট করে বা কারণ নির্দেশ করে হয়তো বলা যায় না। তবে খেয়াল করলে দেখব এর পুরোটা জুড়েই আছে গানের মধ্য দিয়ে অনুভূতিকে নিজস্ব গায়নভঙ্গির আড়ালে প্রকাশ করার এক অদ্ভুত খেলা। তাই ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে’ গাইবার সময় হেমন্তবাবু স্বরলিপি মানলেন অথচ ‘আমার’ কথাটি গাওয়ার সময়ে পঞ্চম বা পা ছুঁয়ে, ‘খেলা’ শব্দটি এসে জোর দিলেন নিষাদ বা নি-এর ওপর এবং নিষাদ ছুঁয়ে গলা পৌঁছল ধৈবতে বা ধা-য়। আর ‘খেলা’ শব্দটি জোর দিয়ে বলার মধ্যেই কেমন বদলে গেল গানটির মানে, গানটির উপস্থাপন। এটাই হেমন্তবাবুর গায়কির অভিনবত্ব। আর রীবন্দ্রসংগীতের সঞ্চারীতে এসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেন গানের মুডটি তুলে ধরেছেন অন্য মাত্রায়। যেমন, ‘আমার এই পথ তোমার পথের থেকে’ গানটি গাওয়ার সময় সঞ্চারীতে এসে যখন তিনি গেয়ে ওঠেন ‘শ্রান্তি লাগে পায়ে পায়ে শ্রান্তি লাগে’Ñ তখন শ্রোতা সত্যিই যেন অনুভব করেন সেই শ্রান্তিটুকু।

তোমারে চাহিনি জীবনে

তবে কেবল রবীন্দ্রসংগীত নয়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রজনীকান্ত সেনের তিনটি গান কোথাও আমার অনুভূতিতে সঞ্চারিত করে এক অপার বিস্ময়। যে গান শুনে কোথাও আমি স্থির হয়ে যাই, বাকরুদ্ধ হয়ে যাই, মোহিত হয়ে ঢুকে যাই সুরের সাতমহলে। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া রজনীকান্তের দুটি গান। একটি, ওই বধির যবনিকা, অন্যটি ‘আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে’। আর ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘আমি অকৃতি অধম’। ভাবতে অবাক লাগে, সুকান্তের ‘রানার’ নিয়ে, ‘অবাক পৃথিবী’ নিয়ে যতটা চর্চা হয়, ততটা এই গানুগুলো নিয়ে হয় না। আবার অনেক শ্রোতা জানেই না যে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি কবিতাকে অসাধারণভাবে ‘গান’ করে তুলেছেন। যদিও গানটির সুরকার ছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত।

নীল রঙের সবুজের ছোঁয়া কীভাবে কোথায় লাগেÑ কিছু কিছু গান তার সাক্ষী আছে, নিশ্চুপ।

চুপ হায় চান্দ সিতারে

কেবল গায়ক নন, সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়Ñ বাঙালির কাছে আজও এক বিস্ময়ের নাম। আবার ফিরে যাই ১৯৫৫ সালে। ২৭ মে রূপবানী, অরুনা, ভারতীতে মুক্তি পায় ‘শাপমোচন’। ছবির সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির প্রতিটি গান নিজস্ব বাঙালিয়ানার মোড়কে তৈরি। মজার বিষয় হলো, এই ছবির প্রায় প্রতিটি গানই শুরু খাদের নোটেশন দিয়ে। কিন্তু এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে তারই সুর করা ছবি ‘নাগিন’, সেখানে এককভাবে তার কণ্ঠে একটিই গান ছিল, ‘তেরি দুয়ারে খাড়া এক যোগী’Ñ যার শুরুটি হয় একদম চড়া থেকে। এখন ভাবলে অবাক লাগে ‘মন ডোলে মেরা এন ডোলে’র টিউন। সাপুড়ের বীণের কথা এলেও সহজেই আমাদের যে সুরটি মনে আসেÑ অনেকে হয়তো জানেই না সেই সুরস্রষ্টা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আবার বীণকে ব্যবহার করেই তিনি বাংলায় তৈরি করেছিলেন অদ্ভুত এক সুর। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাথীহারা’তে গীতা দত্ত এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দ্বৈতগান ছিল ‘জাদুভরা এই বাঁশি বাজালে কেন’। আর এই গানের প্রিল্যুড থেকে ইন্টারল্যুডে সাপুড়ের বীণের ব্যবহার শুনতে চমকে উঠতে হয়।

এই মায়া তিথি

সচরাচর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে দুটি রাগের প্রভাব একটু বেশি দেখা যায়। একটি বাগেশ্রী, অন্যটি ইমন। সে ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস’ হোক কিংবা কিশোর কুমারের কণ্ঠে ‘উয়ো শাম কুছ অজিব থি’, হোক; কিন্তু এমনও কিছু সুর আছে যা শুনলে মনেই হবে না সেটার সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আসলে বারবারই তিনি নিজের সুরের ক্ষেত্র ভেঙেছেন, গড়েছেন। তাই, ১৯৫৯ সালে ‘সোনার হরিণ’ ছবিতে গীতা দত্তের গাওয়া ‘এই মায়াবী তিথি’ গানটি শুনলে অনুমান করা যায় না যে, এই গানের সুরকার হেমন্তবাবু। আবার ১৯৫৯ সালেই তিনি সুর করেছেন এমন তিনটি গান হলোÑ ‘নীল আকাশের নিচে এই পৃথিবী’, ‘তোমার ভুবনে মাগো এত পাপ’ এবং ‘আমার জীবনে নেই আলো’Ñ যা ‘সূর্য তোরণ’ ছবিতে গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ভাবতে অবাক লাগে, একই সময়ে তিনি এত রকম সুর করেছেন, কোথাও কোনো সুরের সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। তাই ‘সিং নেই তবু নাম তার সিংহ’র পাশাপাশি ‘কে যেন গো ডেকেছে আমায়’-এর সুরস্রষ্টা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই।

কারা যেন ভালোবেসে

১২/বি জাস্টিস চন্দ্র মাধব রোড। ভবানীপুরের এই বাড়িতে রাত ১১টার পর মাঝে মাঝে জমে উঠত গানের আড্ডা। সেই আড্ডায় হাজির থাকতেন গৃহকর্তা আলোকপ্রকাশ মজুমদার ওরফে লছমীদা, তার ভাই বাচ্চু মজুমদার, যিনি বিখ্যাত গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার হিসেবে। থাকতেন শ্রীচাঁদ দুগার, গিরিশ মুখার্জি রোডের বাসিন্দা, সংগীতের অন্যতম সমঝদার আর নন্দন লেন থেকে আসতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। চার মিনারের প্যাকেটের গায়ে গৌরীবাবু কখনো লিখে রাখতেন কথা। হঠাৎ কোনো গানের কথা মাথায় এলে তিনি সিগারেটের প্যাকেটেই লিখে রাখতেন সেটা। ভাবনীপুরের সেই বাড়িতে আড্ডা চলত কখনো রাত দুটো বা আড়াইটা পর্যন্ত। কখনো সেখানেই তৈরি হয়েছে গানের নতুন সুর। একটা গান যে আসলে বলতেই হয় সুরের মধ্য দিয়ে প্রতিটি শব্দের উচ্চারণে যে বদলে যায় গানের মুডে কথা বরাবরই বোঝা যায় হেমন্তবাবুর গান শুনলে। তিনি নিজেও আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘প্রথমে নজর দিলাম গানের উচ্চারণের দিকে, খুব স্পষ্ট হওয়া চাই, সেই সঙ্গে থাকা চাই মিষ্টত্ব। যা মানুষকে আকৃষ্ট করবে।’ কিন্তু তার গান গাওয়ার সময় আজ কজন সেটা খেয়াল রাখেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close