মাহবুবুল আলম

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জন্মদিনে শ্রদ্ধা

শেখ হাসিনার তৃতীয় কৃতিত্ব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনার গল্প শুধু বাংলাদেশের মানুষই জানে না, জানে বিশ^। এ নিবন্ধ রাজনীতি নিয়ে নয়, দেশ পরিচালনা-বিষয়কও নয়, বরং লেখক চিন্তাশীল শেখ হাসিনার অবস্থান ও অবদান নিয়ে।

পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্রনায়কের জীবন পর্যালোচনা দেখা যাবে, অনেক রাষ্ট্রনায়কই কোনো না কোনো সময় লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। একজন সত্যনিষ্ঠ দার্শনিক বা চিন্তক না হলে তার মধ্যে লেখক সত্তা ক্রিয়াশীল হতে পারে না। তা না হলে তিনি শুধু একজন রাজনীতিক মাত্র। প্রত্যেক ব্যক্তির সংস্কৃতিমনস্কতা তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনীতিকদের মধ্যে লেখালেখি করেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা পৃথিবীতে কম নয়। বাংলার রাজনীতিকদের বেলায়ও একই কথা বলা চলে। আমরা জানি, মুঘল সম্রাট বাবর কবি ছিলেন। রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন এবং আধুনিক চীনের জনক মাওসেতুংও প্রচুর লিখেছেন। সে তুলনায় বাংলার রাজনীতিকদের লেখা সামান্যই। এ ক্ষেত্রে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষ বসু, কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ প্রমুখের নাম স্মরণ করা যেতে পারে। তবে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে ১১ বছর কাটিয়েছেন জেলে। এর মধ্যেও তিনি লিখে গেছেন। তার লেখার মূল বিষয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাঙালির বঞ্চনা-দুর্দশার কথা ও দুঃখী মানুষের দুর্দশার করুণ ইতিহাসের কথা। এগুলো তিনি লিখেছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থা থেকে।

প্রাচীনকাল থেকেই যেসব রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, রাষ্ট্রদর্শন ও মানবিকতার আদর্শগত তাত্ত্বিকতায় সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন, এদের মধ্যে প্রাচীন এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক পেরিকিস থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন, ইংল্যান্ডের উইনস্টন চার্চিল বা সেনেগালের লিওপল্ড সেদর সেংঘর বা দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা ভারতের মহাত্মা গান্ধী ও প-িত জওহরলাল নেহরুও লিখে গেছেন।

বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাদের ধারায় নিজেকে বিন্যস্ত করেছিলেন। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে লিখেছেন

অসমাপ্ত আত্মজীবনী।

কারাগারে রোজনামচা (২০১৭) ও নয়াচীন শিরোনামের প্রকাশিতব্য ভ্রমণকাহিনি ছাড়াও আগরতলা

মামলার বিবরণ-সমৃদ্ধ রচনার কথা উল্লেখযোগ্য।

আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মধ্যেও যে লেখক সত্তাটি ব্যাপকভাবে ক্রিয়াশীল, তার লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ও রচনাবলির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তার লেখা পাঠ করলেই বোঝা যাবে, বই তার কতটা প্রিয় এবং পড়া কতটা নেশা। শেখ হাসিনা নিজেই বই পড়া নিয়ে বলেছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস আমার শৈশব-কৈশোর থেকে। সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করায় আমি এ ভুবনে একজন মুগ্ধ অনুরাগী শুধু। কোনো দিন লিখব এ কথা ভাবিনি। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম আমার। পিতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এক দিন যা ভাবিনি, সময়ের দাবি আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমার এই দীর্ঘ জীবনের স্মৃতি অভিজ্ঞতা ও ভিশনকে সামনে রেখেই এই লেখাগুলো তৈরি করেছি।’ কাজেই তার রক্ত-মজ্জায় বই পড়ার অভ্যাস এ কথা জোর

দিয়ে বলা যায়।

শেখ হাসিনা লিখিত ও সম্পাদিত প্রায় ত্রিশটি বই রয়েছে। বইয়ের তালিকাই বলে দেয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং চারবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তার লেখায় ছেদ পড়েনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা বিশ শতকের আশির দশক থেকে সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখি করে যাচ্ছেন। তাই বলা যায়, লেখক ও নেতৃত্ব দুই সত্তাই শেখ হাসিনার চরিত্রে বিদ্যমান।

শেখ হাসিনা লেখা শুরু করেছেন তার গ্রামজীবনের বাল্যস্মৃতিনির্ভর এক স্মৃতিকাতর (ঘড়ংঃধষমরপ) রচনা, ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার’ দিয়ে। রচনাটির ভাষা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং ভঙ্গিটি আন্তরিক হওয়ায় প্রথমেই তা পাঠককে আকৃষ্ট করে। রচনাটির অন্য গুরুত্ব হলো, লেখকের বেড়ে ওঠা ও তার মানসগঠনের পরিপার্শ্ব ও গ্রামীণ আবহের (জঁৎধষ গরষরবঁ) নিখুঁত চিত্রায়ণ এতে বিধৃত হয়েছে। শেখ হাসিনা লিখেছেনÑ ‘আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। আমার শৈশবের স্বপ্নরঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রামবাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষায় কাদাপানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাকজ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে, তালতমালের ঝোপে বৈচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি ফুলকুড়ি মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে।’ শেখ হাসিনার লেখা পড়লেই বোঝা যায় বাংলা ও বাঙালি

জীবনের কত গহিন

ভেতর থেকে তিনি উঠে এসেছেন।

এই গেল শেখ হাসিনার লেখক সত্তার কথা। এবার আসা যাক, ক্রীড়ামোদী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে তার অবস্থান ও অবদানে। বরাবরই ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি ব্যাপক প্রতিক্রিয়াশীল একজন কা-ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান হিসেবে দেশের খেলাধুলার প্রসার ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন তিনি। যার রক্তের সঙ্গে খেলাধুলা সে কী ক্রীড়ামোদী না হয়ে থাকতে পারে। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ফুটবল খেলোয়াড়। আর ভাই শেখ কামাল তো ছিলেন দেশসেরা ক্রীড়া সংগঠক। তাই শেখ হাসিনার মধ্যে খেলাধুলার প্রতি বিশেষ টান বা আগ্রহ সব সময়ই পরিলক্ষিত হয়। সেই জন্যই শেখ হাসিনা যতবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন ততবারই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে তার শাসনামলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রীড়াক্ষেত্রে বিস্ময়কর

সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close