বিপুল জামান

  ৩০ আগস্ট, ২০১৯

রম্যগল্প

ছাতা নিয়ে এক দিন

ছাতা হারানো নিয়ে খুব কথা শুনতে হয়। এমন কোনো বর্ষার মৌসুম নেই যেটাতে একাধিক ছাতা কিনতে হয়নি। ছেলেমেয়েরা এটা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে। বলে, বাবা, তুমি যে পরিমাণে ছাতা কেন দোকানদারদের উচিত তোমাকে স্পেশাল কনসেশন দেওয়া। রেণু তো বলতে বলতে বলা ছেড়েই দিয়েছে। তার পরও আজকাল সাড়ে চারশ-পাঁচশ টাকার নিচে একদম সাধারণ ছাতাটাও নেই। এ কারণে একটু-আধটু উষ্মা করেই। সেটা থেকে আজকাল বাঁচাতে এগিয়ে আসে মেয়েটা। ও ওর মাকে বলে, কতজনের কত রকম বদ-অভ্যাস থাকে। কেউ আড্ডা দিয়ে দেরি করে বাসায় আসে, কেউ সিগারেট খেয়ে পয়সা ওড়ায়, কত কিছু। বাবা না হয় ছাতা নিয়ে বের হয়ে মাঝে মাঝে ফেরত আনতে ভুলেই যায়। এমন তো হতেই পারে। ছেলেটা হয়েছে পাজির হদ্দ। ফিচ করে হেসে বলে কি না, তাহলে আমি ছাতা না হারালে সিগারেট ধরলে তেমন কোনো সমস্যা নেই বলছিস, আপু? ছেলেটা ওর মায়ের জান। রান্নাঘর থেকে চেচিয়ে বলল, তোমাকে আমি কী ধরাই তা দেখাচ্ছি।

আর মেয়েটাকে বলল, হয়েছে, তোমার আর আবোল-তাবোল বলে আর বাপকে রক্ষা করতে হবে না। বাপকে ভালো বলতে গিয়ে ভাইটাকে কোন পথে ঠেলছো তার খেয়াল আছে? ‘মা, আমি কি তাই বলেছি?’ ব্যস লেগে গেল খাওয়ার টেবিলে একচোট।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম, আমার এই ছাতা হারানো একটা সিরিয়াস সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবলাম, এটা গুরুত্ব দিতে হবে। সামান্য ছাতার কথাটা মনে থাকবে না, এটা কোনো কথা? আমার স্কুলের বন্ধু সওগাত ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলেছিল। হাফেজরা ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে ফেলে। এনসাইক্লোপিডিয়াও নাকি মুখস্থ করেছে কে যেন। আর আমি সামান্য ছাতার কথা মনে রাখতে পারব না? কাল থেকে আর ছাতার কথা ভুলব না। ছাতাটা ব্যাগের ভেতরে ভরে রাখব। তাহলে আর ছাতা ফেলে চলে আসব না।

দুপুরে লাঞ্চ করে মনে পড়ল আরে, আমি যে মনে করেছিলাম ছাতাটা ব্যাগে ভরে রাখব। ডেস্কের পাশে রাখা ছাতা নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখলাম। অফিসের মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে বের হই। তাতে করে অফিস ছুটির জ্যামের চাপটাও কমে আবার নামাজটা হয়ে যায়। নামাজ শেষে দেখি ছাতাটা ব্যাগের পাশে। নিজের ওপর বিরক্ত হলাম। এখনি তো ছাতাটা ফেলে চলে যেতাম। ভ্যাগিস দেখে ছিলাম। নামাজ পড়ে দেখি ঠিকই জ্যামের চাপটা কমে গেছে। ভাগ্যও ভালো। একটা সিট পেয়ে গেলাম। নামার সময় দেখি আরে ছাতাটা তো ব্যাগে ঢোকাতে ভুলেই গেছি। বাসের চিন্তা আর তাড়াহুড়ায় হাতে নিয়ে বের হয়ে কখন যে এসেছি ব্যাগে না ঢুকিয়ে খেয়ালই করিনি। চোখে পড়েছে বলে রক্ষে। নইলে আজও রেণুর কথা

শুনতে হতো।

বাস থেকে নেমে বেশ আত্মতৃপ্তি নিয়ে বাসার দিকে ফিরছি। আজ গিয়েই ছাতাটা রেণুর হাতে দিয়ে বেশ ভাব নেব। আমাকে ছাতা হারানোর জন্য বকাঝকা করা? বেশ একটা লজ্জা পেয়ে যাবে, হুহ? কলিংবেল বাজাতেই রেণু দরজা খুলে দিল। মুখ-চোখ স্বাভাবিক রেখে ছাতা ওর দিকে এগিয়ে দিতেই ওর মুখ হা হয়ে গেল। যা ভেবেছিলাম। কেমন দিলাম আজকে? অন্য দিন তো খুব একেবারে!

: ছাতা এনেছো কেন?

: ছাতা এনেছো কেন মানে? অন্য দিন তো খুব বলো, ছাতা ভুলে এসেছি কেন? কান ঝালাপালা করে দাও। আজ মনে করে এনেছি তাতেও দোষ! দ্যাখ তোর মায়ের কান্ড দ্যাখ!

মেয়েটাও ঘটনায় খুব মজা পেয়েছে। হাসছে মিটিমিটি ওর মায়ের দিকে।

: হাসবি না, ফাজিল মেয়ে। মেয়েকে ধমক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আজ তুমি অফিসে ছাতা নিয়ে গেলে তবেই না ছাতা আনবে! আজ সকালে তো বৃষ্টিই হয়নি। তুমি ছাতা নিয়ে অফিসে যাওনি। তাহলে ছাতা এনেছো কেন?

: ছাতা নিয়ে যাইনি আজ অফিসে?

: না, বলছি তা কানে যাচ্ছে না? আমার হয়েছে যত জ্বালা। উফ এই সংসার কী ঠেলা যায়! আর তুমি এমন ফিচফিচ করে না হেসে ব্যাগটা থেকে টিফিনবাটিটা বের করতে পারছো না। যেমন বাপ তেমনি তার মেয়েটাও।

: তোমার তো ছেলেটাই সব। আমাদের কি তুমি দেখতে পারো, গজগজ করতে ডাইনিংয়ে আমার রাখা ব্যাগ থেকে টিফিনবাটি বের করার জন্য চেন খুলল মেয়ে।

: মা, দেখে যাও। অনু দেখে যা।

: কী হয়েছেরে ধিংগি মেয়ে। চ্যাচাছিস কেন?

অনুও টিভি দেখা বাদ দিয়ে বেরিয়ে এলো।

: দেখ মা, দেখ, বাবার ব্যাগে আরো দুটো ছাতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close