নিও হ্যাপি চাকমার

  ১৪ জুন, ২০১৯

কবিতা

বোধাতীত

কত দিন যাওয়া হয় না যমুনার ওপার

কাশফুল ফুটে ঝরে গেল,

নলখাগড়া বনে প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে উঠেছে কলমিলতা,

বাসন্তী শিহরণে আবার জেগেছে পল্লবী।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখি

ব্যস্ত মানুষের যাওয়া আসা!

স্বপ্ন, আজকাল দেখি না বললেই চলে

ঘুম এলেই বোবায় ধরে;

অবশ শরীরে বয়ে যায় শীতল প্রবাহ।

মাঝরাতে ঘোর ভেঙে দেখি

জঞ্জালের ওপর কাঁথা বুনছি;

লাল, হলুদ সুতোয় জীবন রাঙানোর নিরন্তর প্রয়াস!

দূরে মেঘ জমাট বাঁধে

বর্ষাকালের জন্য প্রতীক্ষা আর সয় না!

অঝোরে বৃষ্টি নামে, ভিজিয়ে দেয় আমার কাঁথা বালিশ।

বিলাসিতা

ইতিহাসের পাতা খুলে বসেছি

শাহজাহানের আমল, আকবরের আমল, সিরাজউদ্দৌলার আমল...

লাল ইটের ইমারত থেকে শুরু করে শ্বেতপাথরের

মসৃণ প্রাসাদ, সুউচ্চ দুর্গ, লালগালিচা বিছানো

শতপদী ফুলের কানন...

হারিয়ে যেতে যেতে সংবিৎ পাই

কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাকে

পুবদিকটা তখন ফর্সা হয়ে উঠছে

আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে একটি মাত্র তারা।

রমিজ আলি দোকানের শাটার খুলছেন

তাকিয়ে আছি তার ক্ষুধার দিকে

নাভি গেড়ে যাওয়া তার টানটান পেট,

আস্তে আস্তে করে বসিয়ে দেন গদিতে।

দু’টাকার চামচিকে সম্রাট

চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,

ওস্তাদ আপনের ঘুম আসে না,

এত ভোরে জাগেন ক্যামনে হরদিন?

রমিজ আলি নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,

ভুক যখন পেট পেরিয়ে চিত্তে উঠে যায়

ঘুম আর আসে না রে সম্রাইট্যা, বয়স হলে বুঝবি

এখন কামে লাগ, যা।

ইতিহাসের পাতা বন্ধ করে শুতে যাই

রাত্রি ছেড়ে দিবাঘুমের তালাশে।

আমার বিলাসিতা অতটুকু

এক জীবনে একটু বিলাসিতা না করলে

জীবন যে বড্ড পানসে হয়ে উঠবে।

ডুবস্নান

একদিন কৃষ্ণচূড়া দেখাবো বলে দরজা ডিঙোতে বলেছিলাম,

শামুকের মতো গুটিয়ে ছিলে, রাজি হওনি।

অন্ধকারের নিকষতার সাথে তোমার প্রেম তখন তুঙ্গে,

তার গভীরতাকে ছুঁঁবে বলে বিনিদ্র থাকতে রাতের পর রাত।

আমি তখন তপ্ত দুপুর

গা থেকে ঠিকরে পড়ে আলোকচ্ছটা

চোখের দ্যুতিতে নেচে বেড়ায় রংধনু

শ্বাসে কালবৈশাখী হাওয়া।

সেই ঝলকে

দিগভ্রান্ত হয়ে দরজা ডিঙোলে,

প্রশস্ত বুকের প্রস্তর ভেঙে বেরিয়ে এলো মাধুকী!

সেই নেশাতে ডুবে মরে মধুকরী

উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে সন্ধ্যার জোনাকি।

অতঃপর প্রভাতের শান্তশুভ্র লগন...

তুমি আমি, ডুবস্নান...

অণু

১.

স্তব্ধ, তেজস্বী ভাদ্রবিকেলে

নীল আলপনা আঁকা কাব্যে

আছড়ে পড়ে অন্তিমরোদ!

২.

চোখ বুজে, মুখ গুজে শর্তযুক্ত প্রেমে

মেতে উঠছি বলে ভেবো না আমি নির্বোধ।

৩.

জারুলগাছে লতিয়ে থাকা ব্রততিকে দেখেছো?

আমি শুধু তার ঘ্রাণ ছড়ানোর প্রতীক্ষায় আছি।

বেহায়াপনা

তেল চিটচিটে জানালার গ্রিলে তেলাপোকার

লেজ ঠোকাঠুকি বেশরমী সঙ্গম,

স্বাস্থ্যনীতির নীতিকথা আওড়াতে আওড়াতে

পাশ্চাত্যের লেবাসে বারবার ফুঁ দেই।

ফিনিস হাতে দাঁড়িয়ে কাজরী

জ্ঞানে অজ্ঞ হলেও তর্কে বেশ বিজ্ঞ!

কোমরে হাত রেখে দেখি লাল পিঁপড়েদের

শৃঙ্খলাবদ্ধ সঞ্চয়ী প্রচেষ্টা!

গ্রিলের বাইরে উইপোকার ওড়াউড়ি দেখে

রীতিমতো হিংসায় জ্বলে মরিÑ

শালা ডানায় জোর থাকুক না থাকুক,

মরুক বাঁচুক, ওড়ার সাধ মিটিয়ে নিলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close