সাময়িকী ডেস্ক

  ১০ মে, ২০১৯

বীরেন মুখার্জী : দীপ্তিমান ৫০

নব্বইয়ের অন্যতম কবি ও নির্মাতা বীরেন মুখার্জীর ৫০তম জন্মবার্ষিকী পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর কাঁটাবনে অবস্থিত ‘কবিতা ক্যাফে’তে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ‘আনন্দ আয়োজন’। এতে বীরেন মুখার্জীর সাহিত্য ও অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা, পাঠোন্মোচন, কবিতাপাঠ ও কবি নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘোর’ প্রদর্শিত হয়। ষাটের দশকের অন্যতম কবি মতিন বৈরাগীর সভাপতিত্বে ‘বীরেন মুখার্জী : দীপ্তিমান ৫০’ শিরোনামের এ আয়োজনে কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কবি আলোময় বিশ্বাস, কবি তপন বাগচী, কবি হাসান মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুজিত কুমার দে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ শেষে স্বাগত বক্তব্য দেন সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির পত্রিকা ‘পটভূমি’ সম্পাদক সুমন ইসলাম। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা ‘বীরেন মুখার্জী : দীপ্তিমান ৫০’ শীর্ষক ‘পটভূমি’র বিশেষ সংখ্যার পাঠোন্মোচন করেন এবং বীরেন মুখার্জীর কবিতা ও ব্যক্তি বীরেন মুখার্জীর সৃজনশীলতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।

আলোচনায় কবি ও গবেষক গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, বীরেন মুখার্জী কবিতায় নিরলস এবং পরিশ্রমী। তার অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকান্ড সম্পর্কেও আমরা পরিচিত। তিনি নির্ভৃতেই এতদূর হেঁটে এসেছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের

পরম্পরা হয়ে উঠেছে।

কবি-সম্পাদক আলোময় বিশ্বাস বলেন, বীরেন মুখার্জী বয়সে ছোট হলেও তাকে আমি ‘দাদা’ সম্বোধন করি। তার কবিতা আমাকে বিশেষভাবে টানে। কবিতার মধ্য দিয়েই তার সঙ্গে আমার পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। তার একটি কবিতায় আছে ‘আমি প্রতিদিন খুন হই’। এ কথাটি প্রকৃত কবির কথা। একজন কবি প্রতিদিনই পুনর্জন্ম লাভ করেন। কবিতার মধ্য দিয়েই তিনি আমার আত্মার কাছে থাকেন সব সময়।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুজিত কুমার দে বলেন, বীরেন মুখার্জী আমার অল্প দিনের পরিচিত হলেও তার নমনীয়তা এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে তার পরিকল্পনা আমার ভালো লেগেছে। আমি তার ভালো কাজের সঙ্গী হতে পেরে গৌরবান্বিত।

কবি-প্রযোজক ও ‘সাহিত্য দিগন্ত’ সম্পাদক জায়েদ হোসাইন লাকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বীরেন মুখার্জীকে পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে কবিতা পাঠ করেন কবি ত্রিশাখ জলদাস, কবি ও জলধি সম্পাদক নাহিদা আশরাফী, আবৃত্তিশিল্পী ফারজানা ইসলাম, কবি মাহবুব মিত্র, অয়ন সাঈদ, আফরোজা মেহেরিমা মুক্তা, মিলন আচার্য,

আশেক-ই-খোদা, রহিম শাহরিয়ার এবং আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ডা. পলাশ বসু, যুগ্ম আহ্বায়ক অনু ইসলাম ও আজাদ মন্ডল।

আনন্দ আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং তার সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন করতে গিয়ে কবি-গবেষক-গীতিকার তপন বাগচী বলেন, বীরেন মুখার্জী কবিতায় যেমন ছন্দ সচেতন, তেমনইভাবে আধুনিক। তার নতুন শব্দ নির্মাণের ঝোঁক অত্যন্ত প্রবল। ব্যক্তিগতভাবেও তিনি সৎ ও কর্মঠ। তার সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘দৃষ্টি’ আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ। তিনি সব সময় কাজের মধ্যেই থাকেন। তিনি ‘ঘোর’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, যা কলকাতায় অনুষ্ঠিত সেকেন্ড সাউথ এশিয়ান শর্টফিল্ম উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য গৌরবের। আমি বীরেন মুখার্জীর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

কবি-সম্পাদক-উপস্থাপক হাসান মাহমুদ বলেন, বীরেন মুখার্জীকে আমি বীরেনদা কবলেই ডাকি, যদিও তিনি আমার ছোট। নব্বইয়ের কবি হিসেবে তার একটি অবস্থান আছে। তিনি আরো পথ হাঁটবেন বলেই প্রত্যাশা রাখি।

কবি বীরেন মুখার্জী তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, একজন কবির জীবনে এর চেয়ে পরম ভালোবাসার আর কী হতে পারে। তার জন্মবার্ষিকী ঘিরে ‘আনন্দ আয়োজন’ অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজক কমিটি, পটভূমি পরিবার ও উপস্থিত কবি-সাহিত্যিক এবং শুভাকাক্সক্ষীদের কৃতজ্ঞতা জানান।

সভাপতির বক্তব্যে কবি-গবেষক মতিন বৈরাগী বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই আমি বীরেন মুখার্জীর কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। কেননা, তাকে আমার সত্যিকারের কবি মনে হয়েছে। একজন প্রকৃত কবির যেসব বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে কবিতার শক্তি থাকতে হয়। বীরেন মুখার্জীর কবিতায় সেই অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে। তার কবিতা আধুনিক, তিনি ছন্দসচেতন এবং নতুনত্বের প্রত্যাশী। পুঁজিবাদের থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেই বীরেন মুখার্জী কবিতা চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। এটা তার একটি বড় গুণ। তরুণ কবিরা যেখানে প্রথা ভাঙতে পারছেন না, কেমন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছেনÑ সেখানে বীরেন মুখার্জী ৫০ পেরিয়েও কবিতায় অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রোহ জাগিয়ে রেখেছেন। তবে এতে তার কবিতায় নান্দনিকতা এতটুকু মøান হয়নি। তিনি সৌন্দর্যসচেতন, জাগতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক দ্রোহী এবং ভালোবাসার কবি। তার কবিতায় নতুনত্ব আছে এবং তিনি ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র স্বরের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন কবিতায়। তাই তার কবিতা দীর্ঘদিন পঠিত হবেÑ এমন আশাবাদের কথা বলা অযৌক্তিক নয়।

সবশেষে বীরেন মুখার্জী নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘোর-দ্য ইনটেন্স অব লাইফ’ প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটির মূল আয়োজক ‘পটভূমি’। সহযোগিতায় দৃষ্টি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস, ফিনিক্স মাল্টিমিডিয়া এবং সিমপ্লেক্স ফায়ার সেফটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close