reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ মার্চ, ২০১৯

সমাগত সমস্ত সুর ধ্বনিত হয় কবিতার মজলিসে

তানভীর এনায়েত একজন আপাদমস্তক কবিÑ এই সত্যটি এতকাল পরে উদ্ঘাটিত হলো তার কাসিদায়ে আফরিঁর মাধ্যমে, যা কোনো রূপ সংশয় ছাড়াই জানান দেয় তার প্রতিটি কবিতা। আলোচনায় যাওয়ার আগে এ রকম একটা পূর্বাভাস দিয়েই শুরু করতে চাইÑ ‘এতটুকু প্রেম নিলে দিয়ে দেব সবটুকু দান/সাক্ষী রাতের ডাহুক, ভোরের শিশির প্রমাণ। দিয়ে দেব তারও বেশি যতটুকু দেওয়ার রসম/দিয়ে দেব খোদার কসম।’ (কসমের অর্ঘ্য) অথবা ‘কিছু কিছু রাত আছে/নিয়ে আসে দিকভ্রান্ত পথিকের সিদ্ধান্তহীনতা। দেয়ালের খসে যাওয়া আস্তর থেকে/নিষ্প্রভ বালিকার মতো বিরহ।’

(অন্তর দেহ)

এমন ছন্দ ও ভাববোধের চরম শিখরে থেকেই অনুপম সব পঙ্ক্তির আয়োজন করেন তিনি। যার কল্পিতরূপ এতই দৃঢ় ও ব্যঞ্জনাময় যা আমাদের একটা মধুর সুরে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। এর সঙ্গে ভাষার প্রায়োগিক সীমানাকে নিজের মতো উচ্ছন্ন করে তিনি সাজিয়েছেন বিপুল আনন্দের এজলাস। আদতে পুরো বইটিকেই মনে হয় কোনো সুফি কিতাবের ছোট ছোট ব্যঞ্জনা মাখা প্রেমের শের। এক আদিম মজলিসে বসে যেন শুনছি সেতারার তানে মরমি গজল। এক নাগাড়ে গেয়ে যাচ্ছেন কোনো কবি। আর তার পাশে তবলায় আলোড়িত হচ্ছে প্রেম, বিরহ ও আবেগের মূর্ত মূর্ত ছোট বুদবুদ। কাতরা কাতরা সুর মূর্ছনায় আন্দোলিত হচ্ছে সময়ের স্থিতগতি। যা আমাদের আচ্ছন্ন করে, তাড়িত করে একটি অপ্রস্তুত মারেফাতের গোলকের পথে। এমন অহম ও সত্য চাতুর্যতাতেই কবি তছনছ করে দেন পাঠকের নিমিলিত অক্ষিযুগল। যেমন তিনি রচনা করেছেনÑ ‘মাবুদ/বুকের ভেতর ছড়িয়ে দিলে/প্রেমের আনকাবুত। জড়িয়ে গেছে জয়িফ হৃদয়/আনকাবুতের জালে/এই বিরহের কালে।’ (কাসিদায়ে আনকাবুত)

একজন পরিপূর্ণ কবি যখন তার সবকিছুকে কেবল সমর্পণ করেন কবিতায়। তার জাগরণ, বিচরণ কিংবা ঘুম পর্বের সেই সময়টুকু ছাপিয়ে অনন্ত ঐশর্য নিয়ে ইবাদাতের কাল। মনে হয় এসব যেন প্রবল সমীক্ষার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে তার কবিতায়। আগেই বলেছি, তানভীর এনায়েত কবি উপাধিকে তুচ্ছ করে কবিতাকে যাপন করে গেছেন দীর্ঘকাল। সেই যাপনের চিত্রছবি, ঐশ্বর্যে মোড়ানো তার কাব্যভাবনার জগতের আলোকোজ্জ¦ল বিভাটিই যেন পরিস্ফুট তার এই কিতাবটিতে। এ যেন এক সুস্থির দৈব আলাপ। কখনো খোদার কাছে বিনীত আর্তনাদ। কখনোবা নিজের কাছে এক অমীমাংসিত প্রশ্নের দ্বৈতালাপ ছেড়ে একছুটে আবার প্রেমিকার কাছে অর্পণের মিনতি। এই যে কবিতা থেকে কবিতায় ছুটে যাওয়া। একসঙ্গে এতকিছুর সংশ্লেষ। তা কেবল কবিতাকে ধ্যান ও যাপনের মাধ্যমেই সম্ভবপর বলে মনে করি।

সবচেয়ে মধুর ও ভয়ের মনে হয়েছে, তার কবিতায় চাতুর্যতা ও বিবিধ ভাষায় শব্দের খেল। বাংলায় তিনি আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষার শব্দ ব্যবহারে এতটা কুশলী হয়ে উঠেছেন; যা আমাদের বিস্মিত করে। পুরো বইয়ের বেশ অধিকাংশ কবিতাতেই তিনি এই তিন ভাষার শব্দের প্রয়োগ করেছেন অভিনব আঙ্গিকে। যেখানে ছন্দ ও মাত্রার গুণাগুণ মেনে কবিতাকে মুক্ত করে দিয়েছেন একটি অনাবিল স্নিগ্ধতার আবেশে। সেই সঙ্গে যারা বলে এসব শব্দ অনাহুত। তাদের অপরিমেয় জ্ঞান কিবা ঈর্ষাকে আরেকটু বাড়িয়েই দিলেন বুঝি। তিনি ভাষাকে অবমুক্ত করে দিয়েছেন। কবিতায় স্বাধীনতার প্রণোদনা দিয়ে সেখানে এনেছেন তার ছন্দের গতি, নতুন ধ্বনিকল্প, অর্থকল্প ও চিত্রকল্পের এক অভিনব যোজনা; যা পাঠককে ছেড়ে দেয় গহিনের ভেতর। যেন তুমিই খুঁজে নাও কোনো নতুন সুর বা ভাবময় দ্যোতনা।

* কাউসার মাহমুদ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close