আনোখা নদী ও জীবনের ধানদুপুর
নিজের ভেতর পৃথিবীকে অবলীলায় জাগিয়ে তুলেন। মুখের আয়নায় দেখেন, ঘাসফুল-নদী। বুকের লোমে যিনি মোহাবিষ্ট করেন পরম আরাধ্য প্রেমকেÑ তিনি আনোখা নদীর বিধাতা হাসান রোবায়েত।
তার কবিতায় চলে বিষণœতার সংলাপ, আম্মার অগোছালো শাড়ির মেধাবী সন্ধ্যা, আব্বার আগের প্রেমিকাকে চিঠি লেখা, মোহনীয় উঠানে চুল বাঁধা দুপুর, জুতা না থাকার যাতনাহীন সুখ।
তিনি লেখেনÑ আনোখা নদীর শাশ্বত অভিসার, ঘুমের শেষে সাইকেলের মাটি ওড়ানো আওয়াজ, বেহায়া রাত্রির গান, অবেলায় তরুণীর নামাতা ছাড়া একতারা চুল।
তার লেখায় প্রাণ পেয়েছে আশৈশব ধান শুকানোর রোদেলা চরণ। লাল ফড়িংয়ের পিঠ ছুঁয়ে বাড়ি ফেরা। গাও-গেরামের তাজা ওয়াজসন্ধ্যা। বেতসপত্রের ছাউনির রূপ, শাড়ির আঁতুর কামনা।
মুগ্ধতার টিকিট ধরিয়ে দেয় তার ‘রসায়ন’ কবিতাÑ ‘বাড়ি ফুরালেই আব্বা চিঠি লেখে/আগের প্রেমিকাকে/এ নিয়ে মার কোনো অভিযোগ নেই/মা চুল বাঁধতেই তেলের কাছে জমা দেয়/সমস্ত দুপুর/ঘরজুড়ে দেশলাই-বিকাল/কেটলিতে পোড়া ঘাম/আঙিনায় ভেজা শাড়ি হেঁটে গেলে/শিউরে ওঠে ধান।’
কবি চোখ ও মনের আয়নায় একের পর এক পড়ে যান, ফেলে আসা বাতি দেওয়া সন্ধ্যা, রোদপুকুরের ঝাঁপাঝাঁপির শিল্প ব্যঞ্জনা। কানে আমূল ঢুকে পড়া পানি-গোসল। তার লেখায় আসে, অভিমান-সমঝোতা। কাঁচা পাতার করুণা। ভয়াবহ আম্মাপ্রেম ও বিছিয়ে রাখা জায়নামাজের ভাবছবি। লিখেছেনÑ ‘আম্মার হাতবালা ইতস্তত গড়িয়ে যাচ্ছে/বিরহ-নামাজ বরাবর/যেন, নাম ধরে ডাকলে রাস্তাও ছোট হয়ে যায়।’
কখনো লেখেনÑ ‘কেবিনের দিকে কতগুলো ঠোঁট পালালো/হাওয়ার কায়দাজুড়ে সাইকেলÑ/এনভেলাপেই শেষ আমি ডেকে ডেকে হয়রান/তুলে রাখা জুতায় আটকে থাকছে পথ।’
কবিতার বানে মানুষ পকেটে পুরার মন্ত্রোশ্বর তিনি। বোধগম্যতার স্বাপ্নিক পুরুষ, হাসান। কবিতায় জলজ্যান্ত বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেন দুই বাংলার ফখরধন্য এই কবি।
এক ফর্মার সাদাসিধে একপত্র আনোখা নদী। দেশলাইয়ে নগর পুড়ে যায় যেমন, আনোখা নদীর প্লাবনেও তেমন ভেসে যেতে পারে হৃদয়ের খরা।
* আমিন আশরাফ
"