মাসউদুল কাদির
তিরাশিতে দাদুভাই
সময়টা প্রথম দশক। আমার মনে পড়ে, আহমেদ কায়সার ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কমলকুঁঁড়ি একাডেমির সবচেয়ে আকর্ষণের মানুষটি ছিলেন রফিকুল হক দাদুভাই। ফেসবুক ওয়ালে দেখলাম, আশরাফুল আলম পিনটু একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমার এই প্রথম মনে হলো, দাদু ভাইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি।
অনেকগুলো ভালো কাজ মনের ভেতর পুশে রাখি, করতে পারি না। নিজেকে ব্যস্ত মানুষ হিসেবে জাহির করার জন্যই হয়তো অনেক ভালো কাজে অংশ নিতে পারি না। এরমধ্যে মহিউদ্দিন আকবর আমার এবং আমাদের জীবনে অসামান্য অবদান রাখলেও তাকে দেখতেও যেতে পারি না। যাই না। নিজের অগোছালো জীবনের করুণ বাস্তবতা এটি।
আজকের দিনে রফিকুল হক দাদু ভাইকে খুব মনে পড়ছে। ছড়া পড়ে পড়ে অনেক পুরস্কার নিয়েছি তার হাত থেকে। অনেক উৎসাহ পেয়েছি। শীলন বাংলাদেশ-এর সাহিত্যসভায় তিনি আসতেন। আমরা দাওয়াত করে নিয়ে আসতাম। আমাদের তরুণরা তাকে ভালোবাসতো। তিনি সম্ভবত যুগান্তরের কুট্টুস লিখতেন। আমরা শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশ হওয়ার আগেই কুট্টুস ছড়াটা শুনতাম। অনেক মজা করে পড়তেন। কত আবেগী শ্রোতা ছিলাম তা বলে বুঝানো যাবে না।
বয়সে আশি পেরিয়ে এখন তিরাশিতে দাদুভাই। তার চলা আর বলায় এখনো
দারুণ বলিষ্ঠতা। ছড়ায় সাহসের গল্প
আঁকেন তসবির দানার মতো। শ্রোতাকে
যাদুর মতো টানে। সমকালীন বাংলা ছড়া সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি
বলতেই হবে।
সাইয়্যিদ আতিক নকীব ভাইয়ের কিশোর কাফেলা, রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের কচিকাঁচার আসর, কবি হাবিবুর রহমান ‘ভাইয়া’র খেলাঘর এবং রফিকুল হক দাদুভাইয়ের চাঁদের হাটÑ বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য চর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছে তা হলফ করেই বলা যায়। আজকের এই দিনে শিশুদের পাতাগুলো আগের মতো প্রাণময় নয়। আমাদের দাদারা যে কাজ করেছেন তাদের চর্চা আমরা তরুণরা ধরে রাখতে পারিনি। পারছি না। বইমেলাকেন্দ্রিক কিছু হয়, তা-ও আন্দোলিত করার মতো নয়।
আমাদের প্রিয় দাদুভাইয়ের কথা বলছিলাম। তিনি চাঁদের হাটের চাঁদ। মিষ্টি চাঁদ। কথায় কথায় মিষ্টি ছড়িয়ে দিতে জানেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক পূর্বদেশের ছোটদের পাতা ‘চাঁদের হাটের’ সম্পাদক ও পরবর্তীকালে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ ৬ দশকের সাহিত্য
সাক্ষী তিনি।
দাদুভাই দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতাও করে চলেছেন। উপমহাদেশে শিশু-কিশোরদের প্রথম সংবাদপত্র ‘কিশোর বাংলা’ তার সম্পাদনায় ঢাকা থেকে দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয়। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরে ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ইতোমধ্যেই তিনি ১৪০৫ বঙ্গাব্দে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। শিশুসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ফেলোশিপ লাভ করেছেন। বাংলা ১৪২০ সালে তাকে শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
রফিকুল হকের ছড়াগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ পান্তাভাতে ঘি, বর্গি এলো দেশে, নেবুর পাতা করমচা ইত্যাদি।
আমরা যুগ যুগ ধরে একজন রফিকুল হক দাদুভাইয়ের অপেক্ষা করি। বিশ্ব শিশুসাহিত্যও এরকমই অপেক্ষা করে। বদলে দেওয়ার মতো আরো নতুন উপহার দেবেনÑ এ প্রত্যাশা আমাদের।
"