reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

ভোরের পাখি

মধ্যবিত্তের জীবননদীর খেয়া

ভোরের পাখি : আদ্যনাথ ঘোষ, প্রকাশকাল : বইমেলা ২০১৮, প্রকাশক : শব্দভূমি, প্রচ্ছদ : আহমেদ ফারুক, দাম : ১২০ টাকা

যিনি দুর্বোধ্যতায় ভরপুর এবং যিনি বিবর্তনশীল নন, তিনি বোধকরি শিল্পের সৃজনী মাপকাঠিতে সৃষ্টিশীল হিসেবে নিজের স্থান করে নিতে পারেন না। কেননা, সৃষ্টিশীল কবির কাজই হচ্ছে প্রতি মুহূর্তেই মূহূর্তকে অতিক্রম করে যাওয়া, আর এই অতিক্রমণের সময় একটি যথার্থ লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

কবি আপন বিশ্বাসকে যত বেশি করে আঁকড়ে ধরে শিল্প রচনার মাধ্যমে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন এবং সেই শিল্প যত বেশি মানবমুখী ও কল্যাণকর হবেÑতিনি তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। বিশেষ করে আমরা সবাই জানি, কাব্য-আত্মার প্রতিধ্বনিতে মানব-অন্তরে নিরবিচ্ছিন্ন কল্যাণমুখী ও সৌন্দর্যের অনুসন্ধানী ভাবনার প্রকাশ ঘটে থাকে।

যিনি প্রকৃত কবি তার কল্পনা মনগড়া নয়। তিনি সর্বদা সচেতনভাবে ভাষার কারুকার্যে আপন কল্পনাকে গেঁথে নির্মাণ করেন এমন এক সাধু ও স্বাধীনভূমি, যেটা বিদগ্ধ হƒদয়ের মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে।

কেননা, প্রকৃতই যিনি কবি, তিনি যথার্থবোধে চিত্রের বাহারি চিত্রায়ন, ইমেজের কারুকার্য এবং ভাষার মারপ্যাঁচে পঙ্ক্তিমালাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যান, যাতে করে সেই সুধাময় বিষয়টিতে কবিতাপ্রেমী পাঠকের মননে ভাবসঞ্চার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়ক হয়ে ওঠে।

কেননা, এইসব বিষয়গুলো সর্বদায় কাব্যের শ্রীবৃদ্ধি এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকে। পাশাপাশি প্রচলিত এবং অবশ্যম্ভাবী স্থূল আবেগের বিষয়টিও কমগুরুত্বপূর্ণ নয়; যা পাঠকপ্রিয়তা আনতে অপরিহার্য। কারণ, সেইসব গুণে পাঠকও বুঝতে পারেন, কবি কাব্যের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে নিগূঢ় এক সৃজনক্রিয়ায় মেতে উঠেছেন। আর তার সেই যথার্থ প্রমাণ মেলে কবি আদ্যনাথ ঘোষের কাব্যগ্রন্থ ‘ভোরের পাখি’র পাতায় পাতায়Ñ নিমিষের রহস্যের মতো/কোনো মায়ামন্ত্রে/বিমোলিন স্মৃতির মতো/আজও রোমন্থন করি/এই মনোরমা আনারসী/শাড়ির আঁচলে/ছিল কোন মুখখানি!

তাই এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, আদ্যনাথ ঘোষের ভোরের পাখি উড়াল দিয়েছে, সমাজ-সম্পৃক্তি ছেড়ে বাউলিনী রোমান্টিক শিল্পের স্বর্গভূমের উদ্দেশে। সেই যাত্রায় সে কবিতাপ্রেমী পাঠককেও সঙ্গী করতে চায়। কেননা, তার ভোরের পাখির ডানা ঝাপটানির সঙ্গে আছে সার্বভৌম আনন্দ-আবেগময় এক প্রশান্তির ছান্দিক এবং নিরবিচ্ছিন্ন ঢেউ। আর সে কারণে বলা যায়, তার রচিত কাব্যগ্রন্থে তিনি সচেতনভাবেই প্রয়োজনুসারে প্রতীক রূপক এবং মিথের আশ্রয় নিয়েছেন। এর ফলে তার কাব্যসম্ভার হয়ে উঠেছে নিমগ্নতা, কিঞ্চিৎ আত্মমুখী ও কিছুটা গভীর। পাশাপাশি যদিও শিল্প এবং শরীরী চেতনা দিয়ে কাব্যগ্রন্থের শুরু হয়েছে, তথাপিও ক্রমান্বয়ে যেন তার পঙ্ক্তিমালায় ভরে উঠেছে প্রচ- আশাবাদের এমন বিমূর্ত চেতনা; যে আশাবাদ মধ্যবিত্তের জীবননদীর একমাত্র খেয়া।

আদ্যনাথের এই কাব্যগ্রন্থে কবিতাসমূহের আরো বৈশিষ্ট্যÑ চিত্র এবং চিত্রকল্প, শব্দালঙ্কার ও অর্থালঙ্কার। এইসব সাধারণ বিষয়গুলো সমগ্র কাব্যগ্রন্থে এক কাব্য-সোহাগার শিল্প-আঁচল যেন বিছিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বিশেষণের ব্যবহার এবং প্রচলিত বিশেষণকে ভেঙে নতুন বিশেষণ প্রয়োগের কারণেও সাধারণ শব্দগুলো যেন নতুন এক মাত্রায় ঝলসে উঠছে। ভোরের পাখির পাতায় পাতায় ফুটে উঠে কাব্য সমাজ চেতনা, রোমান্টিকতা এবং এর পাশাপাশি এসেছে ইতিহাস-ঐ্যতিহ্য চেতনা; যে বিষয়টি সহজেই চতুর্মাত্রিক সময়-চেতনা এবং রোমান্টিকতায় ভরপুর নতুন দিগন্ত। ভোরের পাখির আরো বিশেষ দিক বা গুণাবলি হচ্ছেÑ কাল-চেতনা, সমাজ-চেতনা, রোমান্টিসিজম, মানুষ ও প্রকৃতি চেতনা ও সৌন্দর্যচেতনা।

স সাইদ হাসান দারা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close