শতাব্দী জাহিদ
মেঘ যেমন অস্থির, আমিও
কবিতাভাবনা কি আদৌ লেখা যায়? যায় হয়তো। মেঘ যেমন অস্থির, আমিও। এভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভাবনারও পাল্টি ঘটতে থাকে। যাইহোক, আজ আমার মুহূর্ত ভাবনাটা লেখা যাক।
ভাবছি, কৃষিজীবী মানুষটি শরীর ও মন ব্যবহার করে খেত-খামারে কাজ করছে দিনমান। ওদের শ্রমের মূল্যায়ন কতটুকু হলো!
ভাবছি, কবিতা লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বা অগুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি, মিডিয়া ভাবনা জানতে চাইল। ওই শ্রমিকের কৃষিভাবনা বা জীবনবোধ একজন মিডিয়াকর্মী জানতে চেয়েছে কি না। আদৌ দরকার আছে কি না, ভাবা যেতে পারে। একজন শ্রমিক মহৎ মানুষ কি না, জানি না। তবে আমরা যেন পাশাপাশি দাঁড়ানোর মানসিক জায়গাটার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি। সবার মঙ্গল হোক। আমরা যেন অপরাপর ভালোবাসায় থাকি।
জীবন : ১
আমার প্রাণ শূন্যতনু মৃত্তিকার উর্বরতা ভেঙে
পুনরায় সাতশত স্কয়ার ফিটের জ্যামিতিক জীবনে ফিরেছি-
নরকের বিষণœতা নাকি শহরময় জলধি লিফটের প্রেমিকা
জন্মাবার উল্লাসে ফিরল, তার কোনো ফয়সালা হয়নি এখনো।
শীতের ঘামের জল বেয়ে বেয়ে দোলনচাঁপার লম্বা পাতায়
একদল পোকা নেশার স্ফীতিতে কানন-কলায় মাতে
এরাও কী বারবার ফিরে আসে মাটিতে, ফলে, ফুলে।
পাহাড় নিচে নামলেই নদীর শরীর হয়
ভাঙনে ভাঙনে বোনে দেহের যৌন আভা
ঠিক সেও বাতাসের চোখে দেখা নরম কাদায়
পথ হয়ে ওঠে
মাঠ হয়ে ওঠে
ঘর হয়ে ওঠে পুনরায়
বাজারে বাজারে আমাদের কাটতি জীবন।
ত্রয়ী : ২
তোমার সমস্ত শরীরজুড়ে মিথ্যের বুননে আঁকা পঙ্ক্তি
লেপে দিতে চাই; যেন অতি গোপন কিছু চিত্র
তোমাকে কাঁদায় ভাদ্রের নীল আকাশে। আর প্রকাশ্যে
মুছে ফেলা চিত্রশালা হয়ে উঠবে আমার কবিতার প্রচ্ছদ, চিত্রসমগ্র।
শীতের ধূসর সকালে ঘাসের মাঠ ফিরে আসে যদি
নগ্ন পায়ের চুম্বন, কুয়াশার রোদ, বাতাসের রং
আর তোমার শরীরজুড়ে শুকনো পাতার রেখা, এইসব নিয়ে
পালাব ঘাসের ঘন অন্ধকারের অচেনা রাস্তায়।
চুলের জলে দেয়ালের রং, ঘামের মাটি, জলচুলের নদী
পিঠের পাতা, বুকের বেয়ে ওঠা আকাশ আর যতটা নামা যায়
জলের কীর্তন গেয়েÑ এইসব দৃশ্যাবলি
ঈশ্বর বিশ্বাসী প্রেমিক করে তোলে মৃত্যু অবধি।
তোমাকে খুঁজে বেড়াবÑ নির্জন জঙ্গলের গ্লাসে
নদীর পার ঘেঁষে শত শত ভুল ফুল হয়ে ফুটে আছে
প্রত্যাখ্যানের জ্বলন্ত ক্যানভাসে।
চুম্বন নক্ষত্রের পায়ে উৎসর্গপত্রের মতো
নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেÑ দশমির দুর্গারূপে।
ভেজা চোখের কালো মানচিত্র দুঃখ এবং কান্নার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে
খুঁজে বেড়ায় শরীর।
তোমাকে ছোঁয়ার অপরাধে মাথা পেতে নিই অবিশ্বাস ও বিশ^াস
জীবনের প্রতিটি মধ্যরাতের বৃষ্টির হলুদ রং ধূসর শব্দ।
সিনেমানামা
দৃশ্য : ১
এখানে মাঠের শেষপ্রান্তে আমের মুকুল
চৈত্রের পদ্মার ঢেউয়ের মতো দুলে মিশে যাবে জলে।
দূরের রোদ ঘামে ভেজা নারীর অন্তর্বাসের ন্যায়
পাতায় জড়িয়ে ছ্যাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গমে মিলিত হবে।
দৃশ্য : ২
রাস্তায় হাজারো মানুষ বৃষ্টির জন্য অপেক্ষারত খরার মাটির মতো
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভিআইপির গাড়ির বহরের অপেক্ষা
এই অপেক্ষায় হরহামেশাই নগরের পত্রিকায় মৃত্যু খবর ছাপা হয়
তাতে কী, দৃশ্যের বর্ণনায় এভাবেই দেখানো হয়েছে ঢাকার রাস্তা।
দৃশ্য : ৩
মোটরসাইকেল চালিয়ে দুই কিশোরী কলেজের গেটে এসে হর্ন বাজাবে
চারতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা পরিমল স্যার
ছাত্রীদের বুকের মাপ নেওয়া উচ্ছ্বাসের মুখভঙ্গি নিয়ে, পায়চারিতে
হর্নের শব্দে আঁতকে উঠে আত্মহত্যা বেছে নেবে।
দূরত্ব : ১
তুমি আর আমি চোখ আর জলের মতো কাছাকাছি
পুঁজির ভাষায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ
তারপরেও দেখা হয় না, ভালোবাসা বাঁধে সাতপাক
শুধু জানি ওপারে আমারি মতো তুমিও অপেক্ষায়Ñ
শীত, রোদ ও বৃষ্টি।
দূরত্ব : ২
যদি সিনেমার ফাঁদা স্ক্রিপ্টের মতো সত্যিই আর দেখা না হয়
ওড়না ওড়ানো শরতের এই নীল বাতাসটাও হয়ে যায় পদ্মার জল।
একই আকাশ জোছনার রঙে-আলোয় প্রশ্নশূন্য শিলা
হয়েও হবে না দেখা; দূরত্বে আঁকব দিনপঞ্জি।
অন্য কেউ, নতুন চরিত্র কাশফুলের কাঁটা তুলবে তোমার দিঘল কেশের
হয়তো আবার বদলাব ঠিকানা, তোমার দেওয়া শার্টগুলো তুলব সিন্দুকে
ন্যাপথলিনের জলে বারবার ধোবো দূরত্বের শরীর, পুরনো স্বপ্ন বেচবো
নধর লোকালয়ে।
দেখা হবে না, কথা হবে না গাণিতিক দূরত্ব-
তবুও কেন বাতাসে কেবলই শরতের দীর্ঘশ্বাসের নীল ঢেউ;
গোটা জীবনেও শুকালো না গণিতের ফাঁদে কাটা ঘা।
"