বনী ইসরাইল
মৃত্যুর পূর্বে জন্ম
ইদানীং প্রকাশ্যে, আড্ডায় অথবা অন্তরালে
অনেকেই জিগ্যেস করে, ‘কবি, আজকাল
লিখছেন না কবিতা, কেন?’
আমি মৃদু মন্দ হাসি, মনে মনেও হাসি
ওদের কথার রেশ ধরে বলি,
কবিতা আমি রোজ লিখি
সব সময় লিখি
আগের থেকে আরো বেশি লিখি
কিন্তু সে কবিতা আপনাদের জন্য লিখি না
সে কবিতা আর কেউ পড়তে পারে না।
সন্দিহান চোখে আমাকে বিচার করতে থাকে।
তখন বলি তাদের, শোনো প্রিয় মুখগুলো
যখন আমি ঘর থেকে বের হই তখন কবিতা
যখন বাসে চেপে ধুলো উড়াতে উড়াতে যেতে
থাকি তখন সেটাও কবিতা, দুপুর রোদে
ফুটপাতে সিগারেট টানতে টানতে অপেক্ষা করি
সেটাও কবিতা, যখন রিকশায় উঠে বসি তখনও
কবিতা। আসলে এগুলো অণু কবিতা।
এবার দীর্ঘ কবিতার শুরু...
সে যখন চুলে আঙুল চালাতে মাথা কাত করে
ফুটপাত পার হয় তখন কবিতার জন্মকাল।
আমার সামনে এসে মুখোমুখি বলে, সরি দেরি
হয়ে গেল, তখন কবিতা হাঁটতে শুরু করে।
আমি হেসে আশ্বাস দিই, ভালোবাসি তোমাকে।
তখন তার ভেতরে কবিতা ঢুকে পড়ে রোদের
সাথে। সে ডান হাতের আঙুল দিয়ে আমার
আঙুল পেঁচিয়ে ধরে তখন কবিতা নিশ্বাস নিতে
শুরু করে। ধীরে ধীরে অজান্তে কখন যেন
পাঁচটি আঙুল আর পাঁচটি আঙুলের ভেতর
আশ্রয় নেয়, আমরা পথচারী বা অন্য প্রেমিক
যুগলদের দেখতে দেখতে ভুলে যাই আসলে
ওখান থেকেই কবিতা যৌবন লাভ করে।
সন্ধ্যা নামলে পাশাপাশি চায়ে চুমুক দিতে দিতে
অনেক কথা বলি।
তোমরা জানো না, তখন আমরা
কবিতা তৈরি করি একত্রে। আমি বহুদিন পর
জেনেছি ভালোবাসার কবিতা কখনো একা
লেখা সম্ভব না। এরপর রিকশায় বসে যখন তার
কোমরে হাত রাখি পরম যত্নে, সে তাকিয়ে থাকে
আমার চোখের দিকে, ভালোবাসা খুঁজে সেখানে
জানি তার সমস্ত প্রেম আমি প্রকাশ করেছি
চোখের মতো একটি অবিসংবাদিত কবিতা দিয়ে।
তখন ঠোঁট নামিয়ে আনি ওর কম্পিত ঠোঁটে।
দেখেছি কতবার, সেই প্রথম চুমু দেবার সময়
ঝড়ের রাতে যেভাবে ঘরের মেঝেতে মোমবাতির
শিখা কাঁপে সেভাবেই ঠিক সেভাবেই কেঁপেছিল
ওর ঠোঁট। তোমরা কখনো কবিতাকে চুম্বন
করেছ?
এভাবেই আমি প্রায়শ কবিতা লিখি
তার আঙুলে প্রবেশ করি
তার কোমর স্পর্শ করি
তার ঠোঁটে চুম্বন করি।
এসব আমার ব্যক্তিগত কবিতা
এসবই আমার নিজের জন্য কবিতা।
শোনো, তোমাদের জন্য কখনো কবিতা লিখতে
পারবো কিনা জানি না। যদি না পারি তবে
এই প্রকাশ্য জনারণ্যে আমি নতজানু হয়ে
ক্ষমা চাইছি তোমাদের কাছে।
ওই একটি কবিতার জন্যই, আমি কবি।
"