শতাব্দী জাহিদ
বুবু
বুবু কেমন আছিস, ভাবছিস ফোনে তো কথা হয় চিঠি লিখলাম কেন? তোর মনে আছে, কাকিমার ভয়ে
আমরা ছোট বাবাকে মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি লিখতাম
জানতিস তোকে নেবে না, তা-ও আমার জন্যই লিখতি!
‘আমার মেলার হইহুল্লোড় ভিড় ভালো লাগে না, তুই-ই যা’
আমি কিছুই না ভেবে ছোট বাবার সাইকেলে চড়ে বসতাম দুপুর থেকে
তুই মাথায় তেল দিয়ে দিতি, মা বুকে ফুঁ দিয়ে কিছু চাইতে বারণ করত। জানিস, আমি কিছুই চাইতাম না
ছোট বাবায় দিত
কাকিমাকে বলতে নিষেধ ছিল!
প্রতিবারই তবু মুখ ফসকে বলে দিতাম।
কাকিমা কি যে বাজে কথা বলত মাকে-তোকে।
তুই পায়ের আঙুলে উঠোন খুঁটতি, মা চোখের জলে ভেজা কুলায় ছোট বাবাদের চাল বেছে দিত।
‘তোমাদের কিছু লাগলে বোলো, আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি
নতুন মালিক খুব ভালো, বেতনও একটু বেশি, কাজও কম’
তোর মিথ্যা বলার উচ্চারণগুলো ঠিক বুঝি, মা-ও বোঝে হয়তো
বাড়িতে অনেকে তোর চাকরি নিয়ে এটা-ওটা বলে;
কেউ কেউ সৌদি আরবের কিচ্ছাও শোনায় ইনিয়ে-বিনিয়ে
কাকিমা প্রতিবাদ করে জানিস! মা কিছুই বলে না, শুধু কাঁদে।
তুই যাওয়ার পর কাকিমা অনেক বদলে গেছে, ছেলে-মেয়ে দুজনেই শহরে
মার খুব খোঁজখবর রাখে, ভালোও বাসে ইদানিং।
আমার চাকরি হয়েছে বুবু! বড় চাকরি
সরকারি ব্যাংক, অনেক টাকা মাইনে
অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠিয়েছি তোকে, দেখ
এবার চলে আয় বুবু, চলে আয়।
তোকে আর মাকে নিয়ে একটা ভালো থাকার জীবন লিখব
তারাদের মাঠে বাবাও নিশ্চয় অপেক্ষায় আছে-
সত্যি সত্যি একটা ভালো থাকার চিঠি পাবে একদিন
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবে- ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ, তুমি ছাড়া ওদের কেউ নেই মাবুদ, তুমি দেখো দয়াময়!’
বুবু আজই চলে আয় আরবের সব হিসেব চুকিয়ে
ঈদের বন্ধে বাড়ি যাব
ছোটবাবার সাথে কুরবানি দেব, মা মাংস বিলাবে কাকিমার পাশে
মাথাব্যথা বলে আর শুয়ে থাকতে হবে না মাকে, বাবার ছবির দিকে চেয়ে।
বুবু একদম দেরি করিস না, চলে আয়
বাবার কবরের পাশে একটা স্কুল দেব, তুই পড়াবি
আমার আর তোর মতো যারা আছে গ্রামে।
চলে আয় বুবু, চলে আয়।
"