শতাব্দী জাহিদ
প্রতিলিপি
ইদানীং বাড়ির নাম্বার স্ক্রিনে ভাসলেই
বনপথে হারিয়ে ফেলা শৈশবের মতো আঁতকে উঠি
এই আঁতকে ওঠা শিখেছি বাবার কাছে।
সন্ধ্যায় আমি আর আপা হারিকেন জ্বেলে পড়তাম
দূর থেকে বাড়িতে কেউ টর্স দিলেই আলোর ভয়ে আঁতকে উঠতেন বাবাÑ
টানাটানির সংসার, কোনো পাওনাদার কিনা?
বড় হয়ে আমরাও বুঝতামÑ কাউকে বুঝতে দিতাম না।
বাবার কিছু হলো! মা’র শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না মাস কয়েক
বিয়োগের আখ্যানপত্রে এইতো বেঁচে আছে আমার।
মিমির বিয়ের কথাটা আপা বলতে না চেয়েও কেঁদে উঠেছিল স্পিকার
‘আমরা তো গরিব, মোড়লের ভালোবাসা হয় মোড়লের সাথে।’
পুঁথির জন্মের সময় সেই গরিবানা ফাঁদেই নিভে গেলেন আপা
দাইমা রুসু কাকি ভয়ে থরথর কণ্ঠে আঁকল মৃত্যুর পয়গাম
বাতাস কাঁপিয়ে কানে আসে মা’র বিলাপ;
ভুল উচ্চারণে মক্তবের পোলাপানের কোরান তেলওয়াত।
সেই থেকে বাড়ির নাম্বার স্ক্রিনে জ্বললেই আঁতকে উঠি।
বাড়িতে আমিই ফোন করি এখনÑ ইদানীং কমে যাচ্ছে এও ঠাওর পাই
ভেঙে পড়া পুরনো ঘর স্থাপত্যের আধুনিকতায় কংক্রিটের বাড়ি দাঁড়িয়েছে।
গরিবানা নাই আমাদের, পুঁথিও স্কুলে যায়, মাকে নিয়ে ছড়া বাঁধে,
বড় হয়ে মায়েদের ডাক্তার হবে, ইংরেজিতে শোনালো সেদিন।
আপা এভাবে আমাকে ইংরেজি শেখাত শৈশবে, এখন শেখায় পুঁথি।
এখন আপার দেওয়া মুখস্থ ইংরেজিতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উঁচুত্ব শিখি
আর রাশিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা- হরেক দেশের ছাত্রদের
রকেট সায়েন্স শেখাই- এরা কেমনে যেন আপার লেকচার বুঝে ফেলে ঠিকঠাক!
শুধু আমার নাম্বারের নীরব বিজ্ঞানটাই বোঝাতে পারি না কাউকে।
জানি, পুঁথিও বোঝাতে পারবে না আমার বয়সে এসে।
"