এক ঝলক চোখাচোখি
প্রসব বেদনা : সাদত আল মাহমুদ, প্রকাশনী : কাকলী প্রচ্ছদ : মশিউর রহমান, মূল্য : ১৬০
কাকলী প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে সাদত আল মাহমুদের ‘প্রসব বেদনা’। নীলফামারীর অজপাড়া গাঁয়ের ট্রাকচালক মকবুলের পরিবারের সুখ-দুখের কাহিনি নিয়েই লেখক তার উপন্যাসের পশরা সাজিয়েছেন। বইটির কাহিনি গড়ে উঠেছে এক সর্বহারার লেখক হবার স্বপ্নের কথা। বোহেমিয়ান জীবনের আলোকে যার ভেসে যাবার কথা। বাবা মারা যান শৈশবে। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে। সেখানে অবহেলা আর অনাদর। একসময় মা-ও তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। এমনই শত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার উপাখ্যান ‘প্রসব বেদনা’।
সব সৃষ্টিতে প্রসব বেদনা থাকে। বেদনা ছাড়া ভালো কিছু হয় না। একসময় মুখরোচক সেøাগান ছিলÑ বিপ্লব মানেই ধ্বংস নয় সৃষ্টির প্রসব বেদনামাত্র। তেমনি বেদনার প্রসব করেছেন লেখকের উপন্যাসের নায়ক জামাল। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার মানসিক শক্তি যিনি পেয়েছেন তার গর্ভধারিণীর কাছ থেকে। সেই গর্ভধারিণীর চলে যাবার পর থেকে এই বিশাল পৃথিবীতে তিনি একা হয়ে পড়েন। কখনো হোটেল বয় আবার কখনো বাসের কন্ডাক্টর, জীবনের বাঁকে এসে হয়ে যান ছাপাখানার কম্পোজিটর। শেষ জীবনে এসে হন স্টেশনের কুলি। জীবনের বাক বদলায় কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয় না। লেখক হবার স্বপ্ন তার অধরায় থেকে যায়। কিন্তু কথায় আছেÑ চেষ্টায় সব আশার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তাইতো রেলের কুলি একদিন প্রকৃত লেখক হয়ে ওঠেন।
উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে সাদত তার নায়ককে যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা উপন্যাসের ধারা থেকেই স্পষ্ট। আমরা যেসব সিনেমা বা গল্প পড়ি সেখানে গল্পের নায়ক চিরকালই অপ্রতিরোধ্য। সাদতের উপন্যাসেও সেটির দেখা মেলে। আবার প্রেমপ্রীতি বিষয়ে আমাদের বদ্ধমূল ধারণাÑ নায়ক-নায়িকার শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আসবে সেটিও প্রত্যাশিত, তবে সাদতের উপন্যাসে এখানেই ব্যতিক্রম। তার উপস্থাপনা এবং গল্পের স্টাইল প্রচলিত ধারণা থেকে অনেকটাই পাঠককে বের করে এনেছে। তার এই লড়াই-সংগ্রাম এমনকি বেঁচে থাকার জন্য রুটি-রুজির আবেদন রয়েছে তবে অবাধ প্রেমের অভাব নায়িকার। এক ঝলক চোখাচোখি আছে, আবার নিম্নবর্ণের মেয়ের সঙ্গে একটি সঙ্গমময় রাত রয়েছে। তবে সেটি কোনোভাবেই প্রেমের আদিখ্যেতাকে স্পষ্ট করে না। বরং পদ্মাবতীর দৃঢ়তা-মানবিকতা পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যায়। পরিসংখ্যানে এসে লেখক নায়ককে লেখক হয়ে ওঠার সুযোগ এবং তার বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন। একটু খটকা লাগলেও উপস্থাপনার কারিশমায় তাকে সহজ পাচকে পরিণত করেছে। এ ক্ষেত্রে উপন্যাসের ক্যানভাসটা আরো একটু প্রশস্ত হলে পাঠকের আপত্তি ছিল না।
উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে লেখক যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন একজন পাঠক তাতে রোমাঞ্চিত হবেন। কারণ, আমরা অনেকেই উত্তরবঙ্গের ভাষার সারমর্ম উপলব্ধিতে আনতে পারি না। কিন্তু যেভাবে তার বয়ান দিয়েছেন তাতে পাঠকের বুঝতে কষ্ট হয় না এই ভাষার মর্মার্থ কী এবং কী হতে পারে। এখানেও লেখক নিজেকে যথার্থ ভাষাবিদ হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন।
-কামাল সিদ্দিকী বাবু
"