বিজ্ঞান ডেস্ক
বিরলতম কণার হদিস পেল সার্ন
যেন আস্ত একটা ‘নক্ষত্রম-ল’ লুকিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার অন্তরে, অন্দরে! যে নক্ষত্রম-লে একটা নক্ষত্র চক্কর মারছে আরেকটা নক্ষত্রকে। আর দুটো নক্ষত্রকে ঘিরেই পাক মেরে চলেছে একটা ‘গ্রহ’। ব্রহ্মা-ে যাকে বলে ‘বাইনারি সিস্টেম’। এমনই একটি ‘বাইনারি সিস্টেম’-এর হদিস মিলল এবার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের মুল্লুুকেও! এক কথায়, যা অভূতপূর্ব। যা কণা (পার্টিকল) সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের এত দিনের ধ্যানধারণা আমূল বদলে দিল। পাঁচ বছর আগে, ২০১২ সালে ‘ঈশ্বরকণা’ বা ‘হিগস বোসন’-এর আবিষ্কারের পর কণা পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এত বড় মাপের আবিষ্কার এই প্রথম। কোনো কণার অন্তরে-অন্দরে একই সঙ্গে দুটি ভারী কোয়ার্কের সন্ধান এর আগে মেলেনি। বহু দিন ধরেই এমন কণার খোঁজে জোর ‘তল্লাশি’ চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
জেনেভার অদূরে, সার্নের ভূগর্ভস্থ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের এলএইচসি-বি পয়েন্টে ওই সবেচেয়ে ভারী কণার হদিস মিলেছে। যার শরীরটা গড়ে উঠেছে দুটো খুব ভারী কোয়ার্ক (চার্ম কোয়ার্ক) আর একটা হাল্কা কোয়ার্ক (আপ কোয়ার্ক) দিয়ে। এর আগে এমন কোনো কণার হদিস পাননি বিজ্ঞানীরা, যার অন্তরে-অন্দরে একই সঙ্গে রয়েছে দুটি খুব ভারী কোয়ার্ক (চার্ম কোয়ার্ক)। আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ প্রকাশের জন্য জমা পড়েছে।
এই ব্রহ্মা-ের যাবতীয় পদার্থের (তা সে মৌলই হোক বা যৌগ) শরীরই গড়ে উঠেছে প্রোটন, নিউট্রনের মতো কণাদের দিয়ে। ওই প্রোটন, নিউট্রনরা যে কণা-পরিবারের সদস্য, তার নাম-‘ব্যারিয়নস’। সব ‘ব্যারিয়ন’ কণার শরীরই গড়ে ওঠে সাধারণত তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে। যার মধ্যে একটি কোয়ার্ক হয় খুব ভারী। বাকি দুটি কোয়ার্ক ওজনে অনেকটাই হালকা হয়। আদতে ছয় ধরনের কোয়ার্ক হয়। আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ আর বটম।
এই প্রথম কোনো ‘ব্যারিয়ন’-এর হদিস মিলল, যার শরীর গড়া একই সঙ্গে দুটি ভারী কোয়ার্ক আর একটা হাল্কা কোয়ার্ক দিয়ে। কণাটি কতটা ভারী, জানেন? প্রোটন, নিউট্রনের মতো যে ‘ব্যারিয়ন’ কণাগুলোর কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, সদ্য আবিষ্কৃত কণাটির ওজন কম করে তার চার গুণ। ওজনের মানদ-ে ৩ হাজার ৬২১ মিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট (১ মিলিয়ন মানে
১০ লাখ)। সম্প্রতি জেনেভা থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ওই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের এলএইচসি-বি পয়েন্টের মুখপাত্র গিওভান্নি পাস্?সালেভা। তার কথায়, ‘এই অভিনব কণার আবিষ্কার ব্রহ্মা-ের চার রকমের বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল স্ট্রং ফোর্সকে বোঝার আরো ভালো হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
"