বিজ্ঞান ডেস্ক

  ০৯ জুলাই, ২০১৭

প্লুটো গ্রহ নয় কেন?

নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত আমরা প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে জেনে এসেছি। সেই সময় গ্রহের সংখ্যা ছিল ‘নয়’। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০৬ সালে প্লুটোকে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও প্লুটো গ্রহ থাকবে কী থাকবে না সেই বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। কিছুদিন আগেও প্লুটোকে আবার গ্রহ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্লুটো গ্রহের মর্যাদা ফিরে পায়নি। এটি এখন একটি বামন গ্রহ হিসেবে সৌরজগতের সদস্য।

প্লুটো যখন গ্রহ ছিল তখনকার সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনায় এর আকার-আকৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর কক্ষপথ যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্লুটোর কক্ষপথটি অতি বিশাল এবং সূর্যকে চক্রাকারে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ২৪৮ বছর। একজন মানুষের জীবদ্দশাতেও সৌরজগতে প্লুটোর অবস্থানের খুব বেশি পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। তার পরও প্লুটো যদি এর আগে গ্রহ হয়ে থাকে, তাহলে এখন গ্রহ নয় কেন? সেই আলোচনাই এখানে করব। তবে প্লুটো কেন গ্রহ নয় সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে এর নাড়ি-নক্ষত্র সম্বন্ধে একটু জেনে নেওয়াই ভালো। প্লুটো আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তুগুলোর একটি নয় এবং তাই খালি চোখে এটিকে শনাক্ত করার প্রশ্নও আসে না। প্রকৃতপক্ষে, প্লুটোর চেয়ে অনেক অনেক বিশাল এবং সূর্যের কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও নেপচুনকে খালি চোখে দেখা যায় না। বরং নেপচুন গ্রহটি আবিষ্কার করা হয়েছিল ইউরেনাস গ্রহের কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করে আরেকটি গ্রহের উপস্থিতি অনুমান করে। নেপচুন আবিষ্কৃত হয় ১৮৪০-এর দশকে। নেপচুন আবিষ্কারের পর এর গতি পর্যবেক্ষণ করে নবম একটি গ্রহের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অনুমান করা হয় উনিশ শতকের শেষাবধি। অজানা বলে এই গ্রহটির নাম দেওয়া হয় প্ল্যানেট এক্স, কেউ কেউ বলেন প্ল্যানেট নাইন। ১৮৯৪ সালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পারসিভাল লয়েল আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য অ্যারিজোনায় লয়েল অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৬ সাল থেকে এই নবম গ্রহটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু হয়। ১৯০৯ সাল নাগাদ গ্রহটির সম্ভাব্য কয়েকটি অবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হয় যদিও এটি তখনো পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। ১৯১৬ সালে গ্রহটিকে শনাক্ত না করেই লয়েল মারা যান। তবে তার অজান্তেই ১৯১৫ সালে তার তোলা দুটি ছবিতে প্লুটোকে অস্পষ্টভাবে দেখা গেছে। লয়েলের মৃত্যুর পর অবজারভেটরির কর্মকা- দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এবং অবশেষে ১৯২৯ সালে লয়েলের স্ত্রী কনস্ট্যান্স লয়েলের উদ্যোগে ক্লাইড টমবফ নামে ২৩ বছর বয়সী এক জ্যোতির্বিদকে নবম গ্রহটি খোঁজার কাজে নিয়োগ করা হয়। আগের মতোই টমবফের কাজ ছিল সম্ভাব্য অবস্থানে টেলিস্কোপ তাক করে আকাশের ছবি তোলা এবং পর পর তোলা ছবিগুলো মিলিয়ে দেখে গতিময় কোনো বস্তু নির্ণয় করা। বছরখানেক পর্যবেক্ষণ

শেষে ১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি

টমবফ এ ধরনের একটি গতি শনাক্ত করেন। আরো কিছু পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হওয়ার

পর এই নতুন আবিষ্কারটিকে হার্ভার্ড কলেজ অবজারভেটরিতে প্রেরণ করা হয়।

নতুন গ্রহটির আবিষ্কারে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে যায় এবং বড় বড় সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়। এবার আসে এর নামকরণের পালা। হাজারেরও বেশি নামের প্রস্তাবনা শেষে এই গ্রহের নামকরণ করা হয় প্লুটো।

প্লুটো আবিষ্কৃত হওয়ার পরপরই এই গ্রহটি বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে থাকে। বিভিন্ন উপন্যাস, চলচ্চিত্রে চরিত্রের নামে, পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের নামে, মৌলিক পদার্থের নামে কিংবা আরো নানাবিধ ক্ষেত্রে প্লুটো যুক্ত হতে থাকে।

প্রাথমিকভাবে যে প্ল্যানেট এক্সের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তার ভর ধরা হয়েছিল অনেক বেশি। কিন্তু প্লুটোর আবিষ্কারের পর এর গতিবিধি এবং অস্পষ্টতা দেখে সন্দেহ করা হলো এটি আগের অনুমানকৃত প্ল্যানেট এক্স নয় বরং অন্য একটি গ্রহ। জ্যোতির্বিদরা প্রাথমিকভাবে এর ভর নির্ণয় করেছিলেন নিকটবর্তী অন্য দুটি গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসের কক্ষপথের ওপর এর অভিকর্ষের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৩১ সালে প্লুটো ভর নির্ণয় করা হয় পৃথিবীর ভরের কাছাকাছি। পরবর্তীতে আরো সূক্ষ্ম মাপে এর ভর কমে আসে এবং মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি নির্ণীত হয়। ১৯৭৬ সালে প্লুটোর বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয় এর ভর পৃথিবীর ভরের ১ শতাংশের বেশি হবে না। ১৯৭৮ সালে প্লুটোর চাঁদ শ্যারন আবিষ্কৃত হলে এর ভর যথাযথভাবে নির্ণয় করার পথ খুলে যায়। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায় এর ভর হবে পৃথিবীর ভরের মাত্র ০.২ শতাংশ। এত সামান্য ভর নিয়ে প্লুটোর পক্ষে ইউরেনাস গ্রহের কক্ষপথে প্রভাব বিস্তার করা দুষ্কর। তাই ধারণা করা হয়, প্ল্যানেট এক্স গ্রহটি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি যদিও তা বিদ্যমান আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist