বিজ্ঞান ডেস্ক
কার্বন নিয়ন্ত্রণ কারখানার যাত্রা শুরু
সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি ক্লাইমওয়ার্কস প্রথমবারের মতো একটি কার্বন শোষক প্ল্যান্ট চালু করেছে, যা বায়ুম-ল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড পৃথক করবে। তারা আশা করছে ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বিশ্বব্যাপী যে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয় তার এক শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রযুক্তি তারা অর্জন করতে পারবে।
কোম্পানিটি প্রতিবছর বায়ুম-ল থেকে ৯০০ টন সিও২ সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে, যেখানে ক্লাইমেট চেঞ্জ প্যানেল নির্ধারণ করেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে অন্তত ১০ গিগাটন সিও২ কমাতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের হিনিল গ্রামের একটি আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ ভবনের ছাদে সরাসরি বায়ুবন্দির এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একটি ছাঁকনির মাধ্যমে বায়ুম-লীয় সিও২ শোষণ করে থাকে। ছাঁকনি যখন সিও২-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তখন এটি এক প্রকার গ্যাস নিঃসরণের জন্য ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়। আর এই অবস্থায় সিও২কে গ্রিনহাউস গ্যাসে রূপান্তরিত করে পরবর্তীতে তা টমেটো, শসার মতো বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যমতে, এই কার্বন লেটুস পাতার উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম।
এক শতাংশ কার্বন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে বর্তমান ইউনিটের অনুরূপ আড়াই লাখ প্ল্যান্টের প্রয়োজন পড়বে। যদিও এই কার্বন ডাই-অক্সাইড অন্যান্য কাজে পুনর্ব্যবহার করা হয়, তবুও এই প্ল্যান্ট কোনো বিপরীত নির্গমন করছে না। বিপরীত নির্গমন অর্জনের লক্ষ্যে অপসারণকৃত সিও২কে ভূগর্ভস্থ চেম্বারে ধরে রেখে স্থির করতে হবে কিংবা শীলার মতো বস্তুতে রূপান্তর করতে হবে।
ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কার্বন ডাই-অক্সাইড আটক করার এবং জমিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্ল্যান্টটি সিও২কে বায়ুম-লে মিশে যাওয়ার পরিবর্তে একটি নিয়মের মধ্যে বন্দি করা হচ্ছে। এছাড়াও কোম্পানিটি সংগৃহীত সিও২কে বিভিন্ন কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী শিল্পে বিক্রি করার অথবা পুনর্ব্যহারযোগ্য হাইড্রোকার্বন জ্বালানি তৈরির সম্ভাবনা দেখছে।
বায়ু থেকে সিও২ আটক করা একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়। এমন ধারণাও রয়েছে যে, প্রতি টন সিও২ ধরে রাখতে ৬০০ ডলার খরচ হবে। কিন্তু ক্লাইমওয়ার্কস কোম্পানিটি সে বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ধারণা, এই খরচ তারা প্রতিটনে ৪০০ ডলারে নামিয়ে আনতে পারবে।
কিন্তু এই প্রযুক্তিটি এর খরচের চেয়েও বিতর্কিত। গত বছর গ্লেন পিটারসসহ কিছু নেতৃস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী সায়েন্স জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এবং যুক্তি প্রদান করে বলেন, এই প্রযুক্তি সামগ্রিক নির্গমনের হার হ্রাস করার চেয়ে বহু দূরে রয়েছে এবং এটি কিছু বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আত্মতুষ্টিতে ভোগাবে, যারা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতের কোনো প্রযুক্তি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসবে। তবে ক্লাইমওয়ার্কসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোফ গিয়াবাল্ড জানান, এই প্রকল্প সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবেই স্পষ্ট, তাই এই নির্গমন রোধে সম্ভাব্য সব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।
"