বিজ্ঞান ডেস্ক

  ২৮ মে, ২০১৭

জ্বালানি সাশ্রয়ী প্লাজমা জেট ইঞ্জিন

বিজ্ঞানীরা এমন একটি জেট ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন, যা একটি মহাকাশযানকে প্রচলিত ইঞ্জিনের চেয়ে দ্রুত পরিচালিত করবে। আর এসব কিছু ঘটবে কোনোরূপ জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই এবং অতি অল্প খরচে। ঠিক এ কাজটিই করবে একটি প্লাজমা জেট ইঞ্জিন। যদিও এই ইঞ্জিনটির গবেষণা এখনো চলছে। এ আবিষ্কারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে স্যাটেলাইট ও অন্যান্য মহাকাশযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা।

এখন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের গবেষকরা চেষ্টা করছেন এই ইঞ্জিনকে গবেষণাগারের বাইরে নিয়ে আসার। প্রচলিত জেট ইঞ্জিনগুলো থ্রাস্ট বা ধাক্কা তৈরির জন্য জ্বালানির সঙ্গে বাতাস সঙ্কোচনের একটি মিশ্রণ ব্যবহার করে থাকে। এই মিশ্রণ পোড়ানোর মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনের পেছন দিকে যায় এবং যানটিকে সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। প্লাজমা জেট ইঞ্জিন তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরির জন্য জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে।

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে বারকান্ট গোকেলে এবং তার দল এই প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি বিমানে স্থাপন করতে যাচ্ছে। তারা বলেন, আমরা এমন এক পদ্ধতি গড়ে তুলতে চাই, যা ৩০ কিলোমিটার ওপরেও চলতে পারবে যেখানে প্রচলিত জেট ইঞ্জিন যেতে পারে না। আর এটি যাত্রীদের বায়ুম-লের শেষভাগে কিংবা এর বাইরেও নিয়ে যেতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি হচ্ছে, এমন একটি বায়ু-শোষক প্লাজমা পরিচালিত ইঞ্জিন গড়ে তোলা-যা এই বিশাল উচ্চতায় চলার জন্য উড্ডয়ন করতে পারবে।

প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি ভ্যাকুয়াম অথবা কম চাপের বায়ুম-লে কাজ করার মতো করে নকশা করা হয়েছে, যেখানে তাদের একটি গ্যাস সরবরাহক বহন করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে গোকেলের দল এমন একটি ইঞ্জিনের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা একটি বায়ুম-লের চাপে বায়ুতেই কাজ করতে পারে। ‘আমরাই সর্বপ্রথম সর্বনিম্ন পর্যায়ের দ্রুতগতির ও শক্তিশালী প্লাজমা জেট উৎপাদন করতে পেরেছি। এই জেট ইঞ্জিনটি সেকেন্ডে দুই কিলোমিটারের বেশি গতিতে পৌঁছতে পারে।’ দলটি ইঞ্জিন চালু করার জন্য ন্যানোসেকেন্ডের ইলেকট্রিক ডিসচার্জের দ্রুতগতির প্রবাহ ব্যবহার করেছে, যা একে জ্বালানিচালিত ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি দক্ষ করে তুলেছে। আর প্লাজমা থ্রাস্ট বিস্ফোরণ প্রয়োগের এটাই প্রথম কোনো ঘটনা।

কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো বিমানকে পরিচালনা করতে হলে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে। উড্ডয়ন শুরুর জন্য দলটি ৮০ মিলিমিটারের ক্ষুদ্র থ্রাস্ট ব্যবহার করেছে, যেখানে একটি বাণিজ্যিক বিমান উড়তে এ রকম প্রায় ১০,০০০ থ্রাস্টের প্রয়োজন পড়ে। এই সমস্যা বর্তমান নকশাকে অনেকটা জটিল করে তুলেছে। আপাতত সমস্যা এড়িয়ে যেতে গোকেলের দল ছোট আকারের বিমান বেছে নিয়েছে যাদের থ্রাস্ট ১০০ থেকে ১০০০-এর মধ্যে থাকবে। আর তাদের ধারণা, এটা নির্মাণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে। তবে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে হালকা ওজনের ব্যাটারির অভাব। প্লাজমা তৈরি ও বজায় রাখতে হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। গোকেলে আশা করছেন, তার পদ্ধতিকে পরিচালিত করতে কমপ্যাক্ট ফিউশন রিএকটরের ব্যবহার করবেন। অন্য সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর মাঝে রয়েছে সৌর প্যানেল কিংবা ইঞ্জিনগুলোকে বিনা তারে শক্তি প্রেরণের ব্যবস্থা করা। এরই মধ্যে তিনি হাইব্রিড বিমানের দিকে নজর দিচ্ছেন, যেখানে প্লাজমা ইঞ্জিনকে কম্পন বিস্ফোরক জ্বালানি ইঞ্জিন কিংবা রকেটের সঙ্গে সংযুক্ত করে জ্বালানি সাশ্রয় করা যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist