বিজ্ঞান ডেস্ক

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৭

সাগরতলের পাঁচ রহস্য

সমুদ্র নিজেই এক বিশাল রহস্যের ভান্ডার। হাজারও বছর ধরে সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই, জনশ্রুতি হিসেবে কত অদ্ভুত গল্প যে মানুষ ফেঁদেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আপনি যদি সাগরের একদম তলদেশে যেতে পারেন, বলা যায় না দেখা পেয়ে যেতে পারেন ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীর কিংবা কোনো জলদস্যুর হারিয়ে ফেলা অমূল্য কোনো রত্নভান্ডার। সাগরের বুকে অনন্তকাল ধরে জমিয়ে রাখা দুনিয়া কাঁপানো কিছু রহস্যের সন্ধান করে আসি চলুন।

দ্য বিমিনি রোড : বাহামার কাছে এই অজানা পাথরের রাস্তা কয়েক দশক ধরেই আশপাশের মানুষ আর বিজ্ঞানীদের কাছে এক ভুতুড়ে স্থাপনা হিসেবেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। তারা বিশ্বাস করেন, এই মানবনির্মিত স্থান সমুদ্রের নিচের রাজ্য আটলান্টিসের ধ্বংসাবশেষ। কেউ জানে না এই রাস্তার উৎপত্তি কোথায় আর কোথায়-ই বা এর শেষ। অর্ধেক মাইল দৈর্ঘ্যরে এই রাস্তার পাথরগুলো ১৩ ফুট লম্বা আর প্রায় ২০ ফুট গভীরে। কিন্তু স্বচ্ছ পানির জন্য একে ওপর থেকেই দেখা যায়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য, এগুলো মানুষের হাতেই গড়া এবং কোনো কোনো পাথর পালিশ করা টেবিলের ন্যায় মসৃণ। ১৯৭৯ সালে দুজন আমেরিকান সমুদ্রের নিচে ওই এলাকায় এক রহস্যময় ত্রিভুজ দেখতে পান এবং পানি থেকে উঠে সেটা নাকি আকাশে মিলিয়ে যেতে দেখা যায়। আরেক সমুদ্রচারী ওই রাস্তা দিয়ে দশ ফুট লম্বা একজনকে হেঁটে যেতে দেখেন।

সাগরতলের ওই স্থানে প্রচুর হাঙ্গর আর বিদ্যুতায়িত পানি থাকার কারণে কাছে গিয়ে পরীক্ষা খুবই অনিরাপদ। তবুও ২০০৪ সালে পাথরের নিচে আরো কয়েক স্তর পাথরের অবস্থান নিশ্চিত করা হয় এবং তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, বিমিনি রোড আসলে কোনো রাস্তা নয়, বরং অনেকগুলো দেয়ালের উপরিভাগ!

রহস্যময় ‘ক্রপ সার্কেল’ : সম্প্রতি একজন জাপানি ফটোগ্রাফার সমুদ্রের নিচে চারদিকে সমানভাবে বালি দিয়ে নির্মিত সুন্দর এক জ্যামিতিক নকশার সন্ধান পান। বালি দিয়ে এ রকম বানানো কিন্তু কোনো ব্যাপারই নয়, কিন্তু সমুদ্রের তলদেশে একবার চেষ্টা করে দেখুন তো। তবে ধন্যবাদ বর্তমানের উন্নত গবেষকদের যে, তারা এই রহস্যের কিনারা করে ফেলছেন। এটি আসলে বিখ্যাত পাফার মাছ তার ডানা দিয়ে করে। পুরুষ পাফার নারী পাফারকে আকৃষ্ট করতে বালি দিয়ে ভালোবাসার এই চক্র নির্মাণ করে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল : বারমুডা ট্রায়াঙ্গলই সম্ভবত সাগরতলের সব থেকে চর্চিত রহস্য। ৬০ বছর সময়কাল ধরে এখানে প্রায় ৫০টি জাহাজ আর আকাশযান নিখোঁজ হয়েছে। গবেষকরা এই এলাকা নিয়ে নানারকম কথা বলেন, এলিয়েন, অতিমানবীয় শক্তি, চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাব, সময় পরিভ্রমণ কোনোটিই বাদ পড়েনি। এগুলোর মধ্যে সব থেকে গ্রহণযোগ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার একজন বিজ্ঞানীর দেওয়া বক্তব্য। তার ভাষ্যমতে, সাগরের ওই স্থানে হাইড্রোজেন সালফাইড আর মিথেনের আধিক্য দেখা যায়, এই গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে পানির ঘনত্ব হ্রাস পায়। ফলে সহজে পানিতে যেকোনো কিছু ডুবে যায় আর আকাশযান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

ইয়াঙ্গুনি পিরামিড : ইয়াঙ্গুনি জাপানের সর্বপশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপ। আশির দশকের মধ্যভাগে এখানে গবেষকরা মানব নির্মিত কিছু পিরামিড আর স্থাপনা খুঁজে পায়। পাথরের ব্লক কাটা আর আকৃতি প্রদানে যেসব যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, তা এর আশপাশেই পাওয়া যায়। যা এর মানবনির্মিত হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করে। পিরামিডগুলো বিশাল আকৃতির। সবচেয়ে বড়টির প্রস্থ ৬০০ ফুট আর দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট। একজন বিখ্যাত জাপানি গবেষক মাসাকি কিমুরার মতে, এই স্থানটি ৫০০০ বছর আগে নির্মিত আর ২০০০ বছর আগে এটি ভূমিকম্পে বিলীন হয়ে যায়।

ডেভিলস সি : এই এলাকাটি তার ভয়াবহতার জন্য এই কাব্যিক নাম পেয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই এলাকার সঠিক চিহ্ন কোনো মানচিত্রে না থাকলেও নাবিকরা তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু এর কারণ কী? কারণ হলো এখানে মৃত্যুপুরীর নীরবতা নেমে আসে আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। এই এলাকায় কোনো ডলফিন বা তিমি দেখা যায় না, এমনকি এখানকার আকাশে ওড়ে না কোনো পাখিও। ১৯৫০ সালের দিকে এখানে পাঁচ বছরের মধ্যে ৯টি জাহাজডুবি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে সিসমিক যন্ত্রের ওঠানামা তীব্রভাবে হয়। সমুদ্রতল এখানে সুষ্ঠুভাবে গঠিত হয়নি ও প্রতিনিয়ত আগ্নেয় দ্বীপ গঠিত আর অদৃশ্য হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে জাহাজগুলোকেও নিয়ে যায়। তবে কিছু গবেষকের মতে, এখানে উচ্চমাত্রার সাইক্লোনই এখানকার রহস্যময় আর ভুতুড়ে পরিবেশের কারণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist