সোনার তথ্য
সোনা এমন এক ধাতু, যা ছাড়া বিশ্ব অচল। অনেকেই ভাববেন টাকা ছাড়া বিশ্ব অচল, কিন্তু এই টাকা বের হয় সোনার বিপরীতে। এই টাকা সংরক্ষিত সোনার চেক স্বরূপ আমরা ব্যবহার করি। এই সোনা নিয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য আপনাকে অবাক করতে পারে।
সোনা যখন ওষুধ
মহামূল্যবান এই ধাতুই ব্যবহৃত হয় ওষুধ হিসেবে। যাদের গাঁট ফোলানো বাত আছে তাদের হাড়ের সংযুক্ত স্থলে সোনা মিশ্রিত এক ধরনের লবণ সিরিঞ্জের মাধ্যমে দেওয়া হয়, যা এই রোগের চিকিৎসায় বেশ উপকারী। এছাড়াও প্রোস্টেট ক্যানসার এবং এইচআইভি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন কিছু প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে সোনা ব্যবহার করা হয় এবং তা বর্তমানে চালু প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এছাড়াও বেশ সফলতার সঙ্গেই ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় সোনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির ক্যানসার কোষ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এবং তা ধ্বংসের কাজেও বর্তমানে সোনার তেজস্ক্রিয় আইসোটোপও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিস্ময়করভাবে তৃতীয় শতাব্দীতে সোনা ব্যবহার করা হতো দাঁতের পরিপূরক হিসেবে বা ক্ষত স্থান ভরাট করার ক্ষেত্রে, অবশ্য এটি এখনো ব্যবহৃত হয়, যারা একটু বিত্তশালী হন তারা সোনার দাঁত ব্যবহার করেন।
সোনার জন্ম
পৃথিবীতে যত সোনা পাওয়া যায় অনুসন্ধানে দেখা যায় তার সবই এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সোনার সর্বমোট পরিমাণ ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টন মাত্র। ধারণা করা হয়, পৃথিবী সৃষ্টির সময়ে বিশাল বড় বড় উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানে, যা পরবর্তীকালেও ঘটে আর তখনই পৃথিবীতে আগমন ঘটে সোনার।
বড় সোনার পি-
এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সব থেকে বড় সোনার পি-ের ওজন ৬৮ কেজি। সোনার এই পি-ের নাম ‘স্বাগতম পি-’। এই পি- আবিষ্কৃত হয় অস্ট্রেলিয়াতে আর যে দুই ব্যক্তি এই সোনার পি- খুঁজে পান তারা প্রথমবার এটিকে দেখে খুশিতে নিজেরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।
সোনালি দক্ষিণ আফ্রিকা
পৃথিবীতে যত সোনার খনি আছে তার দুই-তৃতীয়াংশ আছে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ৭৮ শতাংশ সোনাই ব্যবহৃত হয় অলঙ্কার হিসেবে। বাদবাকি ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক শিল্প যার পরিমাণ ৩২০ টন (এবং ৭,৫০০ টন রুপা ব্যবহার করে)। ইলেকট্রনিক শিল্পে সোনার ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণ, সোনা খুব ভালো তড়িৎ চালনা করতে পারে এবং তা উত্তপ্তও কম পরিমাণে হয়। এছাড়া এটা খুব নরম হওয়ার কারণে এটিকে অন্য যে কোনো ধাতুর তুলনায় খুব সহজেই খুব সূক্ষ্ম আকার দেওয়া যায়।
পৃথিবীতে যত সোনা...
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! উপরেই আলোচনা করেছি, ইলেকট্রনিক শিল্পে সোনার ব্যবহার কেমন হয়। আর বর্তমানে আমাদের ফোন যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে তার জন্যই তৈরি হচ্ছে জটিল সব সার্কিট; আর এতে ব্যবহার করা হচ্ছে সোনা। এক টন ওজনের ফোনের সার্কিটের মধ্যে আছে প্রায় ৩৪০ গ্রাম সোনা, এই তথ্যটি প্রকাশ করে টঘঊচ ২০০৯ সালে। আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে, ২৮ গ্রাম সোনা সংগ্রহের জন্য ৩০ টন ওজনের মাটি খোঁড়ার প্রয়োজন হয়। এই তথ্য জানার পর নিশ্চয়ই পুরনো মোবাইলগুলো ফেলতে আর ইচ্ছা করছে না, তাই না?
এক আউন্স সোনা
এক আউন্স সোনা, যার আকার আকৃতি অনেকটাই আপনার ফোনের ব্যাটারির মতো; তাকে পিটিয়ে এতটাই পাতলা স্তরে রূপান্তরিত করা যায় যে, তা দিয়ে ছোটখাটো একটা রুমের ফ্লোরকে ঢেকে ফেলা সম্ভব। আর এই এক আউন্স সোনাকে যদি মানুষের চুলের তিনভাগের একভাগ সমান পাতলা করা সম্ভব হয়, তাহলে এটি দিয়ে ৮০ কিমি এলাকা ঢেকে ফেলা সম্ভব। সব থেকে মজার ব্যাপারÑএটা সম্ভব; কোনো কল্পনা নয়। এত পাতলা হয়েও সোনা নিজের আকৃতি ঠিকই ধরে রাখবে, যা পৃথিবীর আর কোনো ধাতুর কাছ থেকে আশা করা যায় না।
বিজ্ঞান ডেস্ক
"