reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

কয়লার ইতিবৃত্ত

কয়লা জলমগ্ন পরিবেশে উদ্ভিদরাজির সুদীর্ঘকাল ধরে চাপা পড়ে থাকার ফলে উৎপন্ন কালো অথবা গাঢ় বাদামি বর্ণের খনিজ পদার্থ। কয়লার প্রধান ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। রাসায়নিক শিল্পেও এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ঊনিশ শ’ শতাব্দী পর্যন্ত কয়লাই ছিল শক্তির বাণিজ্যিক উৎসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের পর এর ব্যবহার কিছুটা লোপ পেলেও বর্তমানে এটি পৃথিবীব্যাপী শক্তির উৎস হিসেবে জোরদার ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের প্রধান প্রধান কয়লাক্ষেত্রগুলো হচ্ছে, বেঙ্গল-বিহার কোল ফিল্ডসের ঝরিয়া, রানীগঞ্জ, বোকরাও ও করণপুরাতে অবস্থিত কয়লা খনিগুলো। ভারতে প্রথম কয়লা উত্তোলন শুরু হয় ১৭৭৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে। সে সময় শুধু স্থানীয় চাহিদাকে সামনে রেখে কয়লা উত্তোলন করা হতো। কিন্তু ১৮৫৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে চালুর পর ব্যাপকভাবে কয়লা আহরণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে কয়লা উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯০৩ সাল নাগাদ রানীগঞ্জের কয়লা খনি থেকে ভারতের মোট কয়লা উৎপাদনের শতকরা ৪১.২ ভাগ উৎপাদিত হতো। একইভাবে ১৮৯৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে ব্যবস্থার একটি শাখাপথ ঝরিয়া কয়লাখনিকে সংযুক্ত করলে এ খনির কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ ১৪,৮১৮ টনে বৃদ্ধি পায়। ১৯০৩ সাল নাগাদ ভারতের মোট কয়লা উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হতো ঝরিয়া কয়লা খনি থেকে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি

বাংলাদেশে এ যাবৎ পাঁচটি প্রধান অন্তঃভূপৃষ্ঠীয় কয়লা ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৮৫৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভূভাগের নিচে বিরাট আকারের কয়লাখনির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। ভূতাত্ত্বিকদের মতামতের ভিত্তি ছিল পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জের কয়লাসমৃদ্ধ অঞ্চল এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভের ভূতাত্ত্বিক সামঞ্জস্যতা।

বাংলাদেশে গন্ডোয়ানা কয়লার সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানকার্য ছিল অবহেলিত। ১৯৫৯ সালে স্টানভাক কোম্পানি বাংলাদেশে তেল অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কূপ খনন করার সময় এদেশে উন্নতমানের খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির অনুমান যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়। এ সময় স্টানভাক বগুড়া জেলার কুচমাতে এক্স-১ নামক কূপ খনন করতে গিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৩৮১ মিটার গভীরতায় গন্ডোয়ানা কয়লার সন্ধান লাভ করে। স্টানভাক কোম্পানি প্রথম দিকে কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে খননকাজ চালাতে গিয়ে এ কয়লাখনি আবিষ্কার করে। কূপে কয়লাস্তর ছাড়াও পুরু ইয়োসিন চুনাপাথর স্তর আবিষ্কৃত হয়। এ কয়লাখনির আবিষ্কার বাংলাদেশে আহরণযোগ্য গভীরতায় খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসপি) ইউএন-পাক মিনারেল সার্ভে প্রজেক্টের আওতায় বগুড়া ও রাজশাহী জেলায় ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক, ভূ-পদার্থীয় জরিপ ও খননকার্য পরিচালনা করে। এ জরিপ ও খননকার্যের ফলে ১,০৫০ মিলিয়ন টন মজুদসমৃদ্ধ জামালগঞ্জ-পাহাড়পুর কয়লাখনি এবং প্রচুর পরিমাণে ইয়োসিন চুনাপাথরের মজুদ আবিষ্কৃত হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর বা জিএসবি ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর জেলার বড়পুকুরিয়াতে, ১৯৮৯ সালে রংপুর জেলার খালাসপীর নামক স্থানে এবং ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের দীঘিপাড়াতে পার্মিয়ান যুগের গন্ডোয়ানা কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। বড়পুকুরিয়া কয়লা অববাহিকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে জিএসবি সাতটি উত্তোলন কূপ খনন করতে সক্ষম হয়। জিএসবি এ কয়লাক্ষেত্রের মজুদ, গুরুত্ব ও বিস্তার নির্ণয় করতেও সমর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে খনির বিস্তৃতি, মজুদ, পুরুত্ব, কয়লাস্তরের অবস্থা, অধিচাপ বৈশিষ্ট্যগুলো এবং জল-ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার লক্ষ্যে চীনা ও ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো আরও ২৫টি কূপ খনন করে।

যুক্তরাজ্যের ওয়ারডেল আর্মস্ট্রং ১৯৯০ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লার কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ পরিচালনা করে। ভূ-পৃষ্ঠের ১১৮ মিটার গভীরতা থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এবং বিস্তৃতিতে প্রায় ৫.২৫ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা অবস্থান করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ কয়লাক্ষেত্রে মোট মজুদ ৩০০ মিলিয়ন টন এবং উত্তোলনযোগ্য মজুদ ৭০ মিলিয়ন টন। এ কয়লা অধিক মাত্রায় উদ্বায়ী ও নিম্নমাত্রার সালফার বিটুমিনাস ধরনের। কয়লা উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ সরকার চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে ভূ-পৃষ্ঠের ২৮০ মিটার গভীরতায় বিদ্যমান কয়লাস্তর ভেদ করে ছয় মিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট দুটি খাড়া সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ খনি পদ্ধতিতে ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়। খালাসপীর ও দীঘিপাড়া কয়লাক্ষেত্রের কয়লা বড়পুকুরিয়া কয়লার মতো একই, তবে এ দুই কয়লাক্ষেত্রের বিস্তৃতি, মজুদ ও পুরুত্বসহ বিস্তারিত ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার ব্রোকেন হিল প্রোপ্রাইটর ১৯৯৭ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে ভূ-পৃষ্ঠের ১৫০ মিটার গভীরে গন্ডোয়ানা কয়লা আবিষ্কার করে।

বিজ্ঞান ডেস্ক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist