প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৭

বিবিসির প্রতিবেদন

রংপুরে হিন্দুদের ওপর হামলা কি এড়ানো যেত?

ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তি ছড়ানোকে কেন্দ্র করে রংপুরে গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও আগুনে অন্তত এগারোটি ঘর পুড়েছে। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ওই দিন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন একজন এবং বেশ কয়েকজন হামলাকারী আহত হয়েছেন। যেহেতু ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আলোচনা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছিল, এমনকি চার দিন আগে একটি মামলাও হয়েছিল, তাই প্রশ্ন উঠছে এ ঘটনা এতটা ছড়িয়ে পড়ল কী করে? হামলা কি আগে থেকেই এড়ানো যেত না? গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এমন প্রশ্ন তুলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গাচড়ার স্থানীয়রা জানান, গত ২৮ অক্টোবর প্রথম টিটু রায়ের ছবি দিয়ে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ইসলামের নবীর অবমাননাকর একটি পোস্ট নিয়ে রংপুরে আলোচনা শুরু হয়। এরপর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে দানা বাধতে থাকে। ৬ নভেম্বর রাজু নামের একজন বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় টিটু রায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। টিটু রায়কে গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় পুলিশ সুপারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। ঠাকুরপাড়ার টিটু রায়ের ভাই বিপুল রায় বলেন, এটা নিয়ে উত্তেজনা ছিল। হাটে-বাজারে আলোচনা হয়েছে। মাইকেও প্রচার হয়েছে যে শুক্রবার মানববন্ধন হবে। তাই আগের দিনই আমার বউরে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।

খলেয়া উইনিয়নের একজন কাউন্সিলর জানান, এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল এবং ঠাকুরপাড়ায় গ্রাম পুলিশ দিয়ে আগে থেকে পাহারাও বসানো হয়েছিল। এ ছাড়া ঠাকুরপাড়া থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে শলেয়াসা বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ জানান, তিনি দুই-তিন দিন আগে থেকে এলাকায় মাইকিং করতে শুনেছেন। সেখানে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দিন-তিন দিনব্যাপী মাইকিং হইছে। যে এ রকম আমাদের নবীর নামে কটূক্তি, ব্যঙ্গচিত্র ছবি বাইর করার কারণে আমরা একটা মানববন্ধন করব। আপানারা সকল মুসলিম ভাইয়েরা একত্রিত হয়ে মানববন্ধনে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই কথা বলা হইছে।

ফিরোজ আহমেদ জানান, শলেয়াসা বাজারে শুক্রবার জুমার নামাজের পর একটি মানববন্ধন হয়। জনগণকে শান্ত রাখতে বাজারের ওই মসজিদে ওই দিন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নামাজ আদায় করেন এবং বক্তৃতাও করেন। পুলিশের অনুমোদন নিয়ে নামাজের পর সেখানে ১০-১৫ মিনিটের একটি মানববন্ধন হয় এবং পরে তারা যে যার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু ঘটনার পর তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে এবং পরিস্থিতির অবনতি হয়। রংপুরের মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক কর্মী কে এইচ এম ফখরুল আনাম মনে করেন, এ ঘটনার শুরুতেই প্রশাসন গুরুত্ব দিলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। তিনি বলেন, রামু থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল, রামু থেকে যদি শিক্ষা না নিয়ে থাকি, তাহলে পাবনা থেকে অথবা নাসিরনগর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। কারণ ২৮ তারিখে বিষয়টি জানাজানি হয়। ৬ তারিখে একটি মামলা হয়।

আনাম বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ওখানে ছিল, তিনটি উপজেলার সমন্বয়ে সেখানে ইউএনওরা আছেন, তাদের নিয়ে বসা উচিত ছিল। পলিটিকাল লোক, সুশীলসমাজের সদস্য, ওখানে মসজিদের ইমাম বা যারা ধর্মীয় বিষয়টি নিয়ে বেশি উত্তেজনা করেছে, তাদের নিয়ে বসলে আজকে ঘটনা এত দূর হতো না। আমার কাছে মনে হয়েছে যে সবকিছু মিলিয়ে শুরুতে গুরুত্বের অভাবটা ছিল।

এমনকি সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বিশেষ করে টিটু রায়কে গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি এমন হতো না বলে স্থানীয় মুসল্লিরা দাবি করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি ছিল। রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, জুমার নামাজের পর মানববন্ধন শেষে সবাই চলেও গিয়েছিল কিন্তু পাশের একটি ইউনিয়নের একজন সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরীর জানাজায় অনেক মানুষ ছিল। সেখানে উসকানি দিয়ে তাদের এদিকে নিয়ে আসা হয়। রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। যতটুকু ঘটনা ঘটেছে এটা ন্যূনতম। ক্যাজুয়ালটি এর চেয়ে কমানো সম্ভব ছিল না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist