নিজস্ব প্রতিবেদক
খায়রুল হককে অপসারণের দাবি বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে অপসারণ ও তার গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সেই সঙ্গে ওই রায় নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট শিগগিরই প্রকাশের দাবিতে আগামী রবি, বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দিনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
প্রত্যেক জেলা বারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাকর্মীদের এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে খোকন বলেন, ‘যারা আইনের শাসনের বিশ্বাস করেন, যারা সংবিধানে বিশ্বাস করেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তারা যেন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনাও করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সাহেব তিনি তার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বলেছেন যে, বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার পরে কোনো সরকারি দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়। তিনি নিজেই নিজের রায় ভঙ্গ করে আজকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন।’
মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যেসব সাংবিধানিক পদ আছে সেগুলোর শপথের কথা বলা আছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের শপথের কোনো বিধান নেই। চেয়ারম্যান প্রজাতন্ত্রের একজন ‘কর্মচারী মাত্র’। ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তার বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, কোড অব কনডাক্ট আছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হক সাহেবেরও কোড অব কনডাক্ট আছে। তিনি কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী, সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন না, তিনি চাকরির শর্ত ভঙ্গ করেছেন।’ এ কারণে তাকে অপসারণের পাশাপাশি গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে সংবিধানে আনা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত আগের সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ আমলে আনা সংশোধনী বাতিল করে জিয়াউর রহমান আমলে করা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে বিএনপি। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই রায়কে ‘পূর্ব ধারণা প্রসূত’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করেন। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মামলার ‘ফ্যাক্ট অব ইস্যুর’ সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ‘অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা’ প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলছেন, রায়ের সমালোচনা করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টকেই ‘বিতর্কিত করেছেন’। তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টকে হেয় করেছেন বলে আমরা মনে করি। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা করছেন। এভাবে বক্তব্য রেখে মন্ত্রীরা শপথ ভঙ্গ করেছেন, তাদের এই পদে থাকার কোনো অধিকার নেই বলে আমরা মনে করি। সেজন্য আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি।’ অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
"