নিজস্ব প্রতিবেদক
ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সজাগ থাকুন : শেখ হাসিনা
দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে আবার যাতে ষড়যন্ত্র ‘দানা বাঁধতে’ না পারে, সেই বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লী ও সম্পাদকম-লীর যৌথ সভায় বক্তব্যে ফের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য এটাই, যারাই বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে, যারাই এই জাতির মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে এবং মানুষ একটু সুফল পেতে চেষ্টা করে, তখনই যেন একটি ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠতে চেষ্টা করে।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘তাদের সেই প্রেতাত্মাগুলো এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারার চেষ্টা করে।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে বাঙালি জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, কারা তাদের কল্যাণ করে, তাদের মঙ্গল করে, তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে।’
সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে দলের নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে আস্থা আমরা অর্জন করেছি, তা ধরে রাখতে হবে। মানুষের ভালো-মন্দের খবর রাখতে হবে।’ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থাকলে এগুলো চলমান থাকবে। তা না হলে হাওয়া ভবন, দুর্নীতি, কমিশনবাণিজ্য- এগুলো ফিরে আসবে।’ উন্নয়নের গতিধারা ঠিক রাখতে চাইলে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির এক পর্যবেক্ষণের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, একক চেষ্টায় কোনোকিছুই হয় না। কিন্তু সবকিছুর পেছনে কারো উদ্যোগ থাকে, প্রেরণা থাকে, সাংগঠনিক ক্ষমতা থাকে এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার শক্তি থাকে। সেই শক্তি ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।... অবশ্যই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ... একজন না একজন নেতৃত্বে থাকে।’ কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘তারপরও কিছু কিছু লোক থাকে, যারা এই বিকৃত ইতিহাসকে সামনে আনার চেষ্টা করে।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ‘কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি’ বলায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করে আসছেন মন্ত্রীরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তিনিই বাংলার মানুষকে তাদের অধিকারের কথা, একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং মর্যাদা নিয়ে চলার পথ দেখিয়েছেন। ... তিনিই এ দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাঙালি জাতির একটি আলাদা জাতিসত্তা আছে, বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, বাঙালি নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে- এই চেতনাটা তিনিই বাঙালি জাতির মাঝে জাগিয়ে তুলেছিলেন। ... বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং তারই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে, দেশ স্বাধীন করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। জাতির পিতার নাম-নিশানা মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল। আমাদের কয়েকটা প্রজন্মকে এই বিভ্রান্তির জালে জড়ানো হয়েছিল। ... এমনকি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। কেউ কেউ আরো এক ধাপ ওপরে যেয়ে... কারো একক চেষ্টায় স্বাধীনতা আসে নাই।’
"