মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

  ২৫ মে, ২০১৭

অবহেলায় কবিতীর্থ দৌলতপুর

মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে একটু এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এই গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা আছে কবির কিছু পংক্তিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খানবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে।

মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবিতীর্থ দৌলতপুর। এখানেই নার্গিসের ভালোবাসার ছোঁয়ায় বেজে উঠেছিল ‘অগ্নীবিণা’। ১৯২১ সালে বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন কবি। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া।এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজ শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। বাড়ির পলেস্তারা খসে পড়েছে। দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার হয়নি। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড়, বাঁশবন পার হলেই কবির বাসরঘর। জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। ওই বাসরখাটটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে। কবিপতœী নার্গিস বংশের উত্তরসূরিরা জানান, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন সাদামাটাভাবে অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি। এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। মুরাদনগর উপজেলা ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কমিটির সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানেই তিনি প্রেম ও বিয়ে করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানান তিনি। রাজনীতিক ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া আলী আকবর খানের দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে সেখানে কবিপতœী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে নামকরণের দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, বাঙ্গরা বাজার থানা নজরুল-নার্গিসের নামে করার দাবিতে এর আগে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা নজরুল নার্গিস স্মৃতি রক্ষা ফাউন্ডেশন এবং শেখ সজীব ওয়াজেদ জয় ফাউন্ডেশনের নেতারা ১৯১৫ সালের ১৯ মে মুরাদনগরের উত্তরের জন্য প্রস্তাবিত নতুন থানার নামকরণের দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়েছিলেন।

এদিকে, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হবে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এফবিসিআই এর সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অতিরিক্ত সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, কুমিল্লা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ূম খসরু। বক্তব্য দেবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের। সহস্র কন্ঠে কবিতা আবৃতি হবে ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’। অনুষ্ঠানে মুরাদনগর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist