মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আজ বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস
আজ ২৪ মে। কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ইতিহাসে এক কালো দিবসের নাম। এই দিন সৃষ্টি হয়েছিল এক নৃশংস, ভয়ংকর, মর্মান্তিক ও বিভীষিকার ইতিহাস। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের বাখরাবাদে ১৯৭১ সালের এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল নৃশংস গণহত্যা। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের এই দিনটিকে উপজেলাবাসী ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
এদিকে ওই গণহত্যার জন্য সেখানে এখনো নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতার ৪৫ বছর ধরে এই দাবি স্থানীয়রা করে আসছেন। এর আগে ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ আলোচনা সভা, চিত্রপ্রদর্শনী ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড প্রদর্শনের উদ্যোগ নিলেও আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি স্থানীয়দের।
১৯৭১ সালের ২৪ মে এই দিনে পাক হানাদাররা রাজাকারদের সহযোগিতায় উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারসংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম বাখরাবাদে চালিয়েছিল নৃশংস গণহত্যা। দেড় শতাধিক হিন্দু নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শেষে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে তারা। পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জনকে পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৮ জনকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে।
তাদের মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্র চন্দ্র সাহার ছেলে হরেকৃষ্ণ সাহা। তিনি জানান, ওইদিন ছিল সোমবার। ভোর ৫টায় পাক হানাদার বাহিনী তাদের গ্রামে প্রবেশ করে নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালায়, হত্যাকান্ড চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাটসহ নারী ধর্ষণ করে।
তিনি অভিযোগ করে জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও বাখরাবাদ গণহত্যার স্মৃতিসৌধ নেই। তিনি ওই হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করেন। তার সঙ্গে বেঁচে যাওয়া অন্য দুজন হলেন দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শিলের ছেলে তারক শিল (তারক মাস্টার) ও শহীদ মনোমোহন সাহার ছেলে ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত দুলাল চন্দ্র সাহা।
বাখরাবাদ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান সফু মিয়া সরকার জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এমন বীভৎস চিত্র প্রত্যক্ষ করে আজও শিহরিত হই। ঝোপঝাড়ে, আনাচে-কানাচে বয়ে যাওয়া খালে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। বাখরাবাদ গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি।
"