মাহবুব চান্দু, মেহেরপুর
চিকিৎসার দায়িত্ব নিন, নইলে হত্যার অনুমতি দিন!
বসবাসযোগ্য নয় এমন একটি বাড়ির ছোট দুটি ঘরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্ত্রী, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে ও এক নাতিকে নিয়ে বসবাস মেহেরপুরের তোফাজ্জেল হোসেনের। স্ত্রী-সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে হিমশিম খাওয়া এক অসহায় পিতা তিনি। ২০ বছর ধরে তোফাজ্জেল তিন রোগীর ওষুধ জোগাড় করছেন। অবশেষে ওষুধ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে সন্তানের ‘ওষুধের মাধ্যমে তাদের মৃত্যু অথবা চিকিৎসার দায়ভার নেওয়ার’ আবেদন করেছেন।
জানা যায়, মেহেরপুরে তোফাজ্জেল হোসেন একজন খুচরা ফল ব্যবসায়ী। তিনি জেলা শহরের বেড়পাড়ার আক্কাস আলীর বড় ছেলে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫), মেয়ে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, বড় ছেলে আবদুস সবুর (২৪), ছোট ছেলে তুষার (১৩) এবং নাতি সৌরভকে (৮) নিয়ে তাদের বসবাস। জন্মের কয়েক বছর পর থেকে দুই ছেলে ও নাতি দুরারোগ্য ব্যাধি ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফিতে (বংশগত মাংসপেশির দুর্বলতা) আক্রান্ত। এক এক করে তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ের পুঁজি, শ্বশুরবাড়ির সাহায্য, নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতা, শেষ পর্যন্ত শহরের বড়বাজারে মুন্সি সাখাওয়াত হোসেন পৌর মার্কেটে থাকা দোকানটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে ফুটপাতে ফল বিক্রি করে ৬ সদস্যর জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তোফাজ্জেল।
তোফাজ্জেলের বড় ছেলে সবুরের বয়স যখন ৯ বছর তখন রোগটি দেখা দেয়। একইভাবে ছোট ছেলেটিও ৯ বছর বয়সে আসার পর তার শরীরেও রোগটি বাসা বাধে। নাতি সৌরভের শরীরেও ওই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মেয়ে বিয়ে হয়েছিল; সেখানে যৌতুক নিয়ে বিরোধে সংসার করতে পারেনি। সরেজমিনে তোফাজ্জেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দুই সন্তান বিছানায়। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সবুরের মা শিরিনা বেগম সবুরের সেবা শুশ্রƒষা করছে। তোফাজ্জেল জানান, চোখের সামনে ছেলের এমন কষ্ট বাবা হয়ে সহ্যও করতে পারি না। সারাক্ষণ ওরা বিছানাতেই থাকে।
হাঁটাচলা অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কোলে করে বাথরুমে নিতে হয়।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, এই রোগে শরীরের মাংসপেশি ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে যাবে। চলার ক্ষমতা হারাবে আক্রান্তরা। এমনকি পরিবারের সবাই এ রোগে আক্রান্ত হবে। এ অবস্থায় কোনো পথ না পেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়েছে বলে তোফাজ্জেল জানান। আবেদনে কোনো ওষুধের মাধ্যমে মেরে ফেলার অনুমতি অথবা চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ারও অনুরোধ করেছেন তিনি। তোফাজ্জেল জানান, মেহেরপুরের এমপি ফরহাদ হোসেন দোদুল তাকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এ রোগ প্রথমে শনাক্ত করেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম। চিকিৎসার জন্য ভারতের পিয়ারলেস কেয়ার কোটারি মেডিক্যাল সেন্টার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথ। বাংলাদেশের ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাসের ফ্রান্সের একজন ডাক্তারকে দেখিয়েছেন। কোনো সুফল মেলেনি। তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথ। তারা জানিয়েছেন, রোগটি চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব; তবে তাদের সেখানে দীর্ঘদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত আবদুস সবুর সুস্থ হওয়ার জন্য আর সবুর করতে না পারার কথা জানিয়ে বলেন, কবে আমার মরণ হবে। এ কথা বলতে গিয়ে সবুর হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন।
জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জেলার বাইরে থাকার কথা জানান। জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ডি ডিএলজি খায়রুল হাসান বলেন, বিষয়টি খুব মানবিক। আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাকে কীভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি।
"