নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জুলাই, ২০২০

সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে, জুনে প্রাণহানি ৩৬১ জনের

মে মাসের তুলনায় জুনে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সারা দেশে সড়কে ৩৬১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৩৪৮ জন। মে মাসে যেখানে ২১৩টি দুর্ঘটনায় ২৯২ জন নিহত হয়েছিলেন; সেখান জুন মাসে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় ৩৬১ জনের মৃত্যু হয়। এই হিসাবে জুনে ৩৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে। গতকাল রোববার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব জানা গেছে। দেশের সাতটি দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুন মাসে দেশে ২৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬১ জন নিহত এবং ৩৪৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৭ জন নারী ও ৩২ শিশু রয়েছে। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি (৯৪ জন) প্রাণহানি ঘটেছে। যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪ শূন্য ৬৮ শতাংশ।

এছাড়া দুর্ঘটনায় ৭৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। পাশাপাশি যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই সময়ে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। আর ছয়টি রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতজন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি (৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ৯২টি (৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ২১টি (৭ দশমিক ৭ শূন্য) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই (২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ) ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ খুলনা বিভাগে ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ১০টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো ইত্যাদি।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেÑ দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ইত্যাদি।

প্রতিবেদনের মন্তব্যে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধবিষয়ক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একমাত্র জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া অন্য সব বিষয় প্রাতিষ্ঠানিক। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের এবং এর সাফল্য নির্ভর করে গণপরিবহন খাতের সুশাসনের ওপর। তাই রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close