নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুন, ২০২০

‘বিশেষ বাজেট’ প্রণয়নের প্রস্তাব বিএনপির

করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে তিন বছর মেয়াদি ‘পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’র আলোকে বিশেষ বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার উত্তরার বাসা থেকে ‘বাজেট ভাবনা : অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গতানুগতিক বাজেট পেশ না করে বিশেষ বাজেট দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এই বাজেটের মুখ্য উদ্দেশ্য করোনা সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও দুর্ভোগ উপশম করা। এ পরিস্থিতিতে তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোও থাকতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সংকোচনরোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে। আয় সংকোচন রোধ করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃজনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই সংকটে মানুষের সর্বজনীন মৌলিক প্রয়োজন খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ও মুদ্রানীতি সহজ করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ‘সামাজিক নিরাপত্তা জাল’ নামে কিছু কর্মসূচি থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া উপরে উল্লিখিত কর্মসূচি দুর্নীতিগ্রস্ত।’

জনসেবা খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমেছে, এ তথ্য উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দুর্বলতাও করোনাকালে উন্মোচিত হয়েছে। করোনার প্রভাবে ভোগ, চাহিদা, সরকারি ব্যয়, আমদানি-রফতানির সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে।

এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে বাধ্য। কর্মহীন মানুষের আয় না থাকায় কেনাকাটা কমে গেছে। সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগও কমে যাবে। করোনার কারণে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ১২ শতাংশ কমেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে এভাবে আয় কমে যাওয়ায় ভোগ-ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে।’ ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যক্তি খাতের ভোগ-ব্যয় জিডিপির ৭০ শতাংশ।

এদিকে ছয় মাসে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। গণপরিবহন সংকটে কৃষকও পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে পরবর্তী মৌসুমে এরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন খুদে ব্যবসা, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও সেবা খাতসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কার্যক্রম অচল।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘করোনার ভয়াবহতা না কমলে নতুন বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হবে না। অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছরের মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করাই ভালো হবে।’

আসন্ন বাজেটে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতির প্রস্তাব করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ১ লাখ ৭২ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছর ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে এনবিআর সূত্রে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি, আর বাকি ৫৯ হাজার কোটি অন্যান্য খাত হতে আসবে। এনবিআর এর পক্ষে এত বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আহরণ একেবারেই অসম্ভব। তাই এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে কাল্পনিক কাগুজে বাজেট।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close