চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৮ মার্চ, ২০২০

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ইট চুরির অভিযোগ!

যশোরের চৌগাছার মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ইট চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ এলাকার জনসাধারণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম মাকাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তবে প্রধান শিক্ষক ইট চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমান সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। সরকারের এই উন্নয়নকে রুখে দিতে ও মনঃক্ষুণœ করতে মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ওরফে মাস্টার নূর ইসলাম উঠেপড়ে লেগেছেন। স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা ইট চুরি করে নিজ বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম তার বাড়িতে ১৭৫ পিস স্কুলের ইট মজুদ করে রেখে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি হতবম্ভ হয়ে যান। তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া তার বাড়িতে নতুন একটি পাকা ছাগল ঘর দেখা যায়।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে, স্কুলের ইট দিয়ে ওই ছাগল ঘর করা হয়েছে। তারা আরো জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতেন। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। এ ছাড়া ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে সরকার মহামারি করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় সব কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করেন এবং সবাইকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেন। অথচ প্রধান শিক্ষক সেই নির্দেশ অমান্য করে ওই দিন ইয়ারগান দিয়ে এলাকায় পাখি মারতে বের হন। ইয়ারগান হাতে নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার ভিডিও এলাকায় ভাইরাল হয়।

অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষক যদি এমন সব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে? ছেলেমেয়েরা তো দেশেরে উন্নয়নে কাজে অংশীদার না হয়ে চুরি শিখবে। তাহলে আমাদের সন্তানদের কে কোথায় পাঠাচ্ছি। একজন শিক্ষকের মধ্যে যখন সামাজিকতার কোনো বলয় নেই, সে ক্ষেত্রে ওই শিক্ষকে অবলিম্বে চাকরিচ্যুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ইমান আলী বলেন, আমি বিগত দিনে তিনবার জনপ্রতিনিধি ছিলাম। কিন্তু নুরুল ইসলাম যে একজন প্রধান শিক্ষক, তার মধ্যে কোনো শিষ্টাচার নেই। একজন শিষ্টাহারবিহীন শিক্ষক কখনোই একটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে পারে না।

বল্লভপুর গ্রামের ইসাকুল, বিল্লাল, কামারুল, আবদুর রহমান জানান, বেশ কয়েক দিন আগে আমরা দেখি স্কুলের জন্য আসা ইটের ট্রাক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের বাড়ির সামনে। ট্রাক ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, স্যারের কিছু ইট লাগবে তাই লামাচ্ছি। তবে ইটগুলো স্কুলের।

স্কুলের নির্মাণকাজের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক তাদের দিয়ে স্কুলের ইট দিয়ে ওই ঘর নির্মাণ করে নিয়েছেন। স্কুলের ইট তার বাড়ির সামনে দিয়ে আসার সুবাদে তিনি ট্রাক থেকে ইট নামিয়ে বাড়িতে রেখেছেন। যেহেতু ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ ও প্লাস্টার করা হয়ে গেছে, সেজন্য এখন আর বোঝা যাচ্ছে না ইটগুলো স্কুলের ওই ইট কি না।

এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, স্কুলের ইট যদি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে পাওয়া যায়, তবে আমি তদন্তপূর্বক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজে যে বা যারা বাধা দেবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি ইট চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি ইট কিনে নিয়ে এসেছি। তবে ১৭৫ পিস ইটের কোনো ভাউচার তিনি দেখাতে পারেননি। অন্যদিকে ইয়ারগান হাতে নিয়ে পাখি মারার কথার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটা অনেক আগের ভিডিও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close