নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সৌদি আরব থেকে শূন্যহাতে ফিরলেন আরো শতাধিক

মাত্র তিন মাস আগে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন সিলেট জেলার ২০ বছরের যুবক মোহাম্মদ সেলিম (২০)। কিন্তু ভাগ্য এতটাই খারাপ যে ধরপাকড়ে পড়ে শূন্যহাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। শুধু সেলিম নন, তার মতো আরো ১০২ জন বাংলাদেশিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরব থেকে ফিরতে হয়েছে। রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্স (এসভি-৮০৪) বিমানে তারা দেশে ফেরেন। এদের অনেকেই ফিরেছেন শুধু পরনের পোশাকটা নিয়ে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বরাবরের মতো ফেরত আসাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।

ফিরে আসা সেলিম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই রাস্তা থেকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে ধরে ফেরত পাঠানো হয়। সেলিমের সঙ্গে একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে শূন্যহাতে দেশ ফিরতে বাধ্য হলেন সিলেটের আনহার। ১৪ মাস আগে তিনি গিয়েছিলেন সৌদি। একই জেলার দুলাল মিয়া, মিন্নাত আলী, জামিল আহাম্মেদ, মিনু রহমান, আনোয়ারসহ অনেকেই ফিরেছেন।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সাইফুল ইসলাম বিমানবন্দরে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন। তিনি জানান, কোম্পানির কাজের কথা বলে পাঠানো হয়েছিল সৌদি আরবে। কিন্তু তিনিও ফিরেছেন শূন্যহাতে। বিমানবন্দরে সাইফুল বলেন আমাকে কোনো অপরাধ ছাড়াই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানান।

চলতি বছরে সৌদি থেকে ১৭৫ নারীসহ প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি ফিরেছেন। আর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন যাদের পরিচয় ডিপোর্টি।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, এই যে মানুষগুলো প্রতিদিন ফেরেন তাদের কথা শোনারও যেন কেউ নেই। রোজ রোজ আমরা তাদের দুর্ভোগের কথা শুনি। একেকজন তাদের ধরে ফেরত পাঠানোর যে বর্ণনা দেন তাতে মনে হয় মানুষ নয় গরু-ছাগল বেঁধে ফেরত পাঠাচ্ছে। মধ্যবয়সি এক লোক গতকাল রাতে বিমানবন্দরে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমরা কী মানুষ না। আমার মনে হয় সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন যদি একদিন এসে এসব মানুষের কথা শুনতেন। ফেরত আসা লোকদের কথা শুনে বিমানবন্দরেই ঘটনার বিবরণ নিয়ে তদন্ত করা উচিত কারা তাদের এভাবে বিদেশে পাঠাচ্ছে আর সৌদি আরবই বা কেন তাদের সঙ্গে এমন রূঢ় আচরণ করছে। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।

শরিফুল হাসান বলেন, ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তবে এই যে প্রতিদিন যারা ফেরে বছরে যে গড়ে অন্তত ৫০ হাজার লোক ফেরে তাদের পাশে আমরা সবাই মিলে কীভাবে দাঁড়াবো তার একটা কর্মকৌশল জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close