জাবি প্রতিনিধি

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

জাবিতে ফের আন্দোলন

বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই দিনের বিরতি দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুইটি ব্যঙ্গাত্মক ‘পটচিত্র’ প্রদর্শনী, সংহতি সমাবেশ ও ‘গানে গানে সংহতি’ সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও বুধবারও একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

গতকাল বিকালে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল বন্ধ, ক্লাস বন্ধ, অনেক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সেগুলোও বন্ধ। শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ রকম একটি পরিস্থিাতি তৈরি হলো এর জন্য কে দায়ী? সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা সবাই জানি এর জন্য কারা দায়ী। এখানে মেগা প্রকল্প ঘিরে একটি দুর্নীতি হয়েছে এটা অনেকটাই প্রমাণিত। আর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর যে আন্দোলন শুরু করেছে তা সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’ এ সময় তিনি সরকারের কাছে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘আপনারা যে দাবি তুলেছেন সেটি ন্যায়ের দাবি। আমাদের সবার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের ঐতিহ্য হিমালয় তুল্য। এখন সেই ঐতিহ্য ভূলণ্ঠিত হচ্ছে। শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থানে দখলদারিত্ব চলছে।

জাবি উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। উপাচার্য এবং তার প্রশাসন পরাজয় মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। যদি তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়ের পথে থাকতো তাহলে এমন করে ক্যাম্পাস বন্ধ করত না।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শুধু নিজের মর্যাদাই ক্ষুণœ করেননি তিনি অধ্যাপকের মর্যাদা ও পদকে কলঙ্কিত করেছেন। যে অভিযোগে শোভন-রাব্বানী পদ হারাল সেই অভিযোগে উপাচার্যকে কেন অপসারণ করা হলো না? ’

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ শুধু জাহাঙ্গীনগরের শিক্ষার্থীদের ওপরই হামলা চালাচ্ছে না। ছাত্রলীগের হামলা সারা দেশেই চলছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ছাত্রলীগের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন।’ উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে নুর বলেন, ‘নিজের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকাতে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছেন।

ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শোভন রহমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও আ ক ম জহিরুল ইসলাম, কবি ও সাহিত্যিক অরূপ রাহী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মোহাব্বত হোসেন খান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, রাখাল রাহা (রাষ্ট্রচিন্তা), জাবির সিনেটর মহব্বত হোসেন খান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে আহ্বায়ক হাসান আল মামুন প্রমুখ। সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সিনেটর ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা প্রমুখ।

সমাবেশের শুরুতে সম্প্রতি আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা। ‘উপাচার্যের দুর্নীতি’র অভিযোগসহ ব্যঙ্গ চিত্র অঙ্কিত দুটি পটচিত্র পদর্শন করা হয়। সংহতি সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৭টার পর একই স্থানে গানে গানে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘যারা বন্ধের মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে আইনের লঙ্ঘন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলজনক না। আর আইন না মেনে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া এক ধরনের উসকানি। আমি অনুরোধ করব শিক্ষার্থীরা যেন সিন্ডিকেটের আদেশকে সম্মান জানান। পরিবেশ স্বাভাবিক বজায় থাকুন এটা প্রশাসন চায়। আমরাও চায় যতো দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আসবে ততো দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলেই এই স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close